অনিরাপদ হয়ে উঠছে কারখানাগুলো – খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Published in প্রথম আলো on Monday 8 June 2020

পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতার ধারা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে বর্তমান সময়ে সেটি স্বাভাবিক বিষয়। কারণ, যেসব দেশে আমাদের পণ্য যায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের মধ্যে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাজ্য করোনায় ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। দেশগুলোর মানুষ কর্মহীন অবস্থায় থাকায় তাদের ব্যয়কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যখন বেরিয়ে আসবে, তখন দোকানপাটগুলো ধীরে খুলবে। তবে কেনকাটা দ্রুত বাড়বে সেটি বলা যাবে না। ডিসেম্বরে যদি রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরে, তাহলে সেটিকে সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাই আগামী ছয় মাস কারখানাগুলোর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাদের আয় সংকুচিত হয়েছে। অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি সাবকন্ট্রাক্টিং কারখানায় বর্তমানে কোনো কাজ নেই।

সরকার করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় উদ্যোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। আগামী বাজেটেও সরকার হয়তো রপ্তানিকারকদের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা হয়তো নেবে। তবে আগামী কয়েক মাস রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। তাই নগদ সহায়তার জন্য খুব বেশি বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন হবে না। সেই অর্থ অন্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা গেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহযোগিতা লাগবে। দায়িত্বশীল ব্যবসার অংশ হিসেবে ক্রেতারা যেন এগিয়ে আসেন, সেই আহ্বানও জানাতে হবে।

পোশাকশিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা লে-অফের ঘটনা দুঃখজনক। উদ্যোক্তারা শ্রমিকের মজুরি দিতে সরকারের সহযোগিতা নিচ্ছেন, অন্যদিকে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে করে বহির্বিশ্বে পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই না করতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে নিজের দেশে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা দ্বৈত অবস্থান ইঙ্গিত করে। তাই শ্রমিকদের ন্যূনতম আয় ও কর্মনিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার।

শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকারের গঠিত প্রণোদনার তহবিল থেকে ছোট ছোট অনেক কারখানা ঋণ নিতে পারেনি। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ পোশাক কারখানা ঋণসুবিধা পেয়েছে। বাকি ৪২ শতাংশ পায়নি। তাদের অনেকে শ্রমিকের মজুরি দেয়নি। আবার ঋণ পাওয়া ২৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিকের এপ্রিল মাসের মোট মজুরির ৫৫ শতাংশ বা কম অর্থ দিয়েছে। মজুরি ঠিকমতো না পাওয়ায় শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ দেওয়ার সংজ্ঞাটি বিস্তৃত করে সাবকন্ট্রাক্টিংসহ অন্য রপ্তানি খাতের শ্রমিকের আয়নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ দরকার।

দেশের অভ্যন্তরে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে কারখানাগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠছে। চাকরি কিংবা মজুরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকেরা অনেক ক্ষেত্রে করোনা উপসর্গ লুকাচ্ছেন। তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দেবে না। তারা তখন যেসব দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম, সেখানে চলে যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আবার স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও দেশে আসতে চাইবে না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।

 

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ