ডাউনলোড করুনঃ উপস্থাপনা | পেপার
কোভিড-১৯ অতিমারির ধকল কাটাতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হলে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্প, কৃষি উন্নয়ন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে, দেশের ব্যাংকিংখাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট ও মন্দঋণের চাপ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
দেশের তৈরি পোষাক খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষিত হলেও, পোষাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশ পুর্ণাঙ্গ বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং চাকরি হারাচ্ছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাগন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও ঋণসসুবিধা এখনও যথাযথভাবে ভোগ করতে পারছেন না। এর পাশপাশি, সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমে বাছাই ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সঠিক সমাধান না হলে প্রকৃত অংশীজনেরা প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
মঙ্গলবার ৯ জুন ২০২০ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত “প্রেক্ষিত কোভিড-১৯ঃ সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ও ত্রাণ কর্মসূচির প্রাথমিক মূল্যায়ন” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসকল মতামত উঠে আসে। সংলাপে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম যৌথভাবে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি সিপিডি’র ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা (আইআরবিডি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/664395124111917/
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, থাকা দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চলে আসছে। ইন্টারপোল তাদের সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে আর্থিক প্রতারণার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় রেখেছে। এ অবস্থায় সুশাসনের অভাব ও আইনের শাসন প্রয়োগ না হলে ক্রমবর্ধমান মন্দ ঋণের চাপ ও তারল্য সংকটের ঝুঁকি নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এতে করে, অসাধু গোষ্ঠীর সুযোগ নেওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও, সরকারের চলমান ত্রাণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকৃত জনগোষ্ঠীর কাছে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পৌছে দিতে হলে সুবিধাভোগী বাছাই, ত্রাণ বিতরণ ও ত্রাণের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বিস্তৃত করা জরুরি।
https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/1155568254779911/
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উল্লেখ করেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সুবিধা পাচ্ছেন না। সিপিডি’র জরিপ অনুযায়ী, শুধুমাত্র প্রায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক তাদের এপ্রিল মাসের পুর্ণাঙ্গ বেতন পেয়েছেন, বাকিরা কেউ আংশিক পেয়েছেন এবং প্রায় ২৫ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক হয় অর্ধেকেরও কম বেতন পেয়েছেন কিংবা একেবারে কিছুই পাননি। প্রায় ৬৩ শতাংশ শ্রমিক তাদের বাসাভাড়া পরিশোধ করতে পারেন নি, জরিপে অংশগ্রহনকারী প্রায় ৩৫ শতাংশ শ্রমিকদের স্ত্রী বা স্বামী বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। ড. মোয়াজ্জেম বলে, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাগণ অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছেন। তারা ব্যাংক থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরো আন্তরিকভাবে সহযোগিতার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
সংলাপে সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ড. আহসান হাবীব মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই), ড. লীলা রশীদ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান, জনাব মোঃ ফজলুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্লামি ফ্যাশনস এবং সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), মোঃ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, জনাব মির্জা নুরুল গনি শোভন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ, মিজ চায়না রহমান, সাধারণ সম্পাদক, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) এবং জনাব কাজী ইফতেখার হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন (বিজিবিএ) বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও সংলাপে ব্যবসায়ী, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজনেরা অংশ গ্রহণ করেন।