Published in প্রথম আলো on Tuesday, 23 February 2016
রপ্তানিমুখী শিল্পের সুবিধা দিয়ে নতুন আমদানি নীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সহজ শর্ত বিবেচনায় রেখে সরকার নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ ফেব্রুয়ারি তিন বছর মেয়াদি ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮’ শীর্ষক এই আদেশ জারি করে।
২০১২-১৫ মেয়াদের আমদানি নীতির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৩০ জুন। সে হিসাবে নতুনটির যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। প্রায় এক যুগ ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে যে, নতুন আদেশ জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত আগেরটিই চলতে থাকে।
কয়েকবারের আমদানি নীতি আদেশের প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি হতে প্রতিবারই ৬–৮ মাস দেরি হয়। এবারও হয়েছে সাড়ে ছয় মাস। নতুন আমদানি নীতি আদেশ ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
নতুন নীতিতে নতুন কী আছে—জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন গতকাল সোমবার বলেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিকে প্রাধান্য দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে শিথিলতা আনা হয়েছে। আবার স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার দিকটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’ এই নীতি আদেশ জারির আগে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ৫৪টি বৈঠক করতে হয়েছে।
নতুন আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য, পণ্যের মোড়ক, পাত্র বা কনটেইনারের গায়ে উৎস দেশ (কান্ট্রি অব অরিজিন) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সময় উৎস দেশের সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার দেওয়া সনদ শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।
দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ভোজ্যতেল, সবজি বীজ ও শস্য ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রেও শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে সনদ দাখিল করতে হবে।
মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও পশুখাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে এগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান মাত্রার মধ্যেই আছে মর্মে সনদ দিতে হবে। তবে কয়লা, তুলা, অ্যালুমিনিয়ামের কাঁচামাল এবং রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে উৎস দেশ উল্লেখ বাধ্যতামূলক নয়।
কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে উৎস দেশ বাধ্যতামূলক না করাটা কি ভালো হলো—জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর হতে পারে—এ ধরনের খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে উৎস দেশের উল্লেখ থাকতেই হবে। কয়লা বা তুলাজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখ না থাকলেও তেমন অসুবিধা নেই।
আমদানিকারকদের অর্থের উৎস সম্পর্কে বলা হয়েছে, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা, বৈদেশিক অর্থ সাহায্য ইত্যাদি থাকতে হবে।
বাণিজ্যিকভাবে আমদানিকারক নন—এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য সাত হাজার ডলার মূল্যের আমদানিযোগ্য যেকোনো পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে নতুন আমদানি নীতিতে। প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে সাত হাজার ডলার মূল্যের বেশিও আমদানি করা যাবে।
আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, ২৫ বছরের বেশি বয়সী সমুদ্রগামী জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার ও মৎস্য ট্রলার আমদানি করা যাবে না।
পরিত্যক্ত জাহাজ (স্ক্র্যাপ ভেসেল) আমদানির ক্ষেত্রে বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে না মর্মে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও মালিকের প্রত্যয়নপত্র এবং আমদানিকারকের ঘোষণাপত্র থাকতে হবে।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে আরও বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আমদানি নীতি আদেশ বই আকারে বের হবে।