Published in মানবজমিন on Thursday 7 May 2020
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ফেলো, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আগামী দিনের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ। এটা পাড়ি দিতে হবে দক্ষতার সাথে। তিনি আরো বলেছেন, মধ্যবিত্তরা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে কারণ বাংলাদেশে কোন সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সবজায়গাতেই পরিবর্তন হবে। এ ব্যাপারে মোটামুটি একমত সবাই। এখন একেক দেশে তার বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হয়ত এগোবে। বাংলাদেশের জন্য ৪টি কল্পচিত্র আমি উত্থাপন করেছি। একটি হতে পারে যে এই মুহুর্তে দেশের ভিতরে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী যাদের প্রাধান্য আছে তাদের আধিপত্য আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরেকটি হতে পারে আমাদের দেশে একটি নজরদারি ভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত সমাজ সৃষ্টি হতে পারে। যেটা অনেক ক্ষেত্রেই নিবর্তনমূলক হতে পারে। তৃতীয় সম্ভাবনা যেটি থাকে সেটি হলো সদাশয় কতৃত্ববাদী সরকার হতে পারে। যেখানে সরকার ভালো কাজ করে আবার নিজের মতো করে চলে। চতুর্থত হতে পারে বিকাশমান যে আর্থ সামাজিক শক্তি আছে সেই শক্তিগুলোকে জাতীয়ভাবে একত্রিত করে সেটার একটা রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা এগুতে পারি। বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে এটা দেশের নেতাদের, বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতা অন্যান্য আর্থ সামাজিক গোষ্ঠীর সক্রিয়তা, প্রচলিত রাজনীতির চলমানতা এবং নাগরিকদের বিশেষ করে মধ্যবিত্তের মনোভাবের উপর অনেকখানি নির্ভর করবে।
বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত যে পরিবর্তনটা পৃথিবীতে হয় সেটা হচ্ছে বাস্তব ভিত্তিতে পরিবর্তন। অর্থাৎ অর্থনীতির ভেতরে পরিবর্তন হয়। সমাজের শক্তিগুলোর ভেতরে ভারসাম্যের পরিবর্তন হয়। যার ফলে হয়তো রাজনৈতিক অভিপ্রকাশ থাকলেও থাকতে পারে। যদি সেটা ততদূর গুরুতর হয় আরকি। একটা বড় বিষয় দাঁড়াবে এই করোনা পরিস্তিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ করবো? কতখানি মূল্য দিয়ে বের হবো? এবং সেই মুল্যটা কে দেবে? এটার উপর অনেকখানি নির্ভর করছে আগামী দিনের অর্থনৈতিক বাস্তবতা কিভাবে হবে? এটা মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তকে যেভাবে আঘাত করছে এটাকে যদি সহনশীল অবস্থায় আমরা নিয়ে যেতে না পারি তাহলে নাগরিক মনোভাবের উষ্মা, ক্ষোভ প্রকাশের আশঙ্কা থেকে যাবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্যবিত্তরা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে কারণ বাংলাদেশে কোন সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। তাদের জন্য কোন বীমা নাই। তাদের জন্য পেনশন নাই এবং অনেক্ষেত্রেই তাদের কাজগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক। গত দশ বছরে বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী এগিয়েছে। কিছু সচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু খুব দ্রুতই তারা একটা নিরাপত্তাহীনতার কারণে নব্য দরিদ্রে পরিণত হবে। তারা সেই অর্থে সরকারি ত্রাণের জন্যও যোগ্য হচ্ছেনা। অপরদিকে তাদের এমন কোন বিত্ত সঞ্চয় নেই তারা এই পরিস্থিতিকে সামাল দেবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার একেবারেই এসমস্ত বিষয়ে অসচেতন সেটা বলা ঠিক হবেনা। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর্থিক সহায়তার কথা বলা হচ্ছে। ঋণের সুদ মওকুফের কথা বলা হচ্ছে। এবং তাদের মাইনা পত্র নিশ্চিতকরণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে এটা করা হচ্ছে তার ভেতরে সমন্বয়ের অভাব। দক্ষতার অভাব। অনেকক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব। এই উদ্দেশ্যগুলোকে অনেকসময় সফল করছেনা। এটাই চিন্তার বিষয়। উদ্যোগের ঘাটতি এবং সমন্বয়হীনতা একটা ব্যত্যয় হিসেবে কাজ করছে। আগামী দিনের অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী দিনের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ অর্থনীতি। এটা পাড়ি দিতে হবে দক্ষতার সাথে। সমস্ত শক্তির সম্পৃক্তি এতে প্রয়োজন হবে। সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক উদ্যোগ এবং ব্যক্তি উদ্যোগ সবাইকে একত্র করে চলার মতো একটা কাঠামো আমাদের খুবই প্রয়োজন। আগামী ২/৩ বছর ধরে আমাদের দেশকে পুর্নগঠন, পুর্নবাসন কাজে থাকতে হবে। এই নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটা নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগকেও দাবি করবে।