মুশফিক ওয়াদুদ
Email: mwdipu@gmail.com
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংবাদগুলো পত্রিকার অর্থনীতি পাতায় যখন পড়ি আর টিভিতে দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যগুলো শুনি তখন প্রায় একটি প্রশ্ন মনে জাগে- এ প্রবৃদ্ধি আর ঘটা করে প্রচার করা মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণে আমার মতো ছা-পোছা মানুষগুলোর জীবনমানের ঠিক কি ধরণের পরিবর্তন ঘটতে পারে। ভাবতে গেলেই শঙ্কা জাগে মনে, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ি, হতাশ হই।
গত কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধির গল্পগুলো যখন শুনছি, ঠিক সেই সময়ে এক বছরের ব্যবধানে আমার বেতন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ চাকরির বাজারের শোচনীয় অবস্থা। শুধু আমারই যে এ অবস্থা তা নয়। পরিচিত বন্ধুবান্ধবের অনেকেই বেকার আবার অনেকে উপায়ন্তর না দেখে অর্ধেক কি তারও কম বেতনে কোন এক চাকরিতে ঢুকেছেন। এক বেকার বন্ধু বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে এসেছে এমন আরেক বন্ধুকে প্রশ্ন করছিলেন সেদিন- এ কেমন প্রবৃদ্ধি যা নতুন চাকরি তৈরি করে না? প্রশ্নটা আমারও। প্রবৃদ্ধির এ টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে?
আয় কমলেও ব্যয় ঠিকই বাড়ছে। রিক্সাওয়ালা পাঁচটি টাকা বেশি চেয়ে বসেন চালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে, বাড়ি ভাড়াটা বেড়ে যায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে। কিন্তু আমি যদি আমার বসের কাছে আগামীকাল বেতন বাড়ানোর আবদার করি, বস হয়তো বলে বসবেন – “আগামী মাস থেকে অন্য কোন চাকরি দেখেন। এত মাইনে দিয়ে আপনাকে আমরা রাখতে পারবো না।”
এই যখন অবস্থা তখন টিভিতে বড় বড় অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য শুনি–মধ্য আয়ের দেশ হয়ে যাবার স্বপ্ন দেখান, সরকার বাহাদুরকে সাধুবাদ শোনান, প্রবৃদ্ধির গল্প বলেন আর আরো কি কি ভাবে জনগণের উপর কর আরোপ করা সম্ভব তার দিক নির্দেশনা দেন সরকার বাহাদুরকে।
আমার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় বিনামুল্যের শিক্ষা লাভ করা এই বড় বড় জ্ঞানী গুনি মানুষদের আমাকে নিয়ে ভাবার সময় হয় না। ইন্ড্রাস্টি মালিকদের সাথে পাঁচ তারকা হোটেলে তারা ব্যস্ত সময় পার করেন। অর্থনীতিতে বৈষম্য নিয়ে আলাপ করা আজ বড় সেকেলে ব্যাপার।
তবে কে আমাকে নিয়ে, আমাদেরকে নিয়ে ভাববেন। কে বলবে এই প্রবৃদ্ধি সবার প্রবৃদ্ধি নয়। গুটি কয়েক মানুষের প্রবৃদ্ধি। কে বলবে এলডিসি থেকে উত্তরণের উদযাপনের দিনে বহু শিশু পরিবারের খাবার জোগাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ১৪ ঘন্টা শ্রম দিয়েছে।
নতুন কোন অর্থনীতিবিদ আয় বৈষম্য নিয়ে কি কথা বলবেন?
আমার, আমাদের কথাগুলো কি বলবেন?
নাকি এই প্রবৃদ্ধি আর মধ্য আয়ে উত্তরনের গল্প শুনতে শুনতে অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য আর করের বোঝার নিচে আমরা নি:শেষ হয়ে হয়ে যাবো—সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন।