মোঃ আবু সালেহ
মেঘের আড়ালে ঢাকা সূর্যের মত, এদেশের মেধাবী ও সৃষ্টিশীল তারুন্য প্রচারণার ডামাডোল থেকে দূরে থেকে নানা বিষয়ে বিস্ময়কর অবদান রেখে চলেছে। আমরা প্রায়শই হতাশ হই তারুন্যের দানব রূপ দেখে- নীতিহীন রাজনীতিতে, সন্ত্রাসে, বিবেকহীন লেজুড়বৃত্তিতে, নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজিতে, মেধাহীন প্রকাশে আর দিশাহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় তারুন্যের ‘মাতৃ’ রূপ- যখন তা মানবিক সৃষ্টিশীল রশ্মি ছড়ায়- সাধারণের কল্যানে, সমাজের উন্নয়নে বা দেশ বিনির্মাণে।
এ কথা বলা অন্যায় হবে না, বর্তমানে বিভিন্ন মানবিক সেবামূলক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস, যেগুলো খুব দরকারি কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে অপ্রতুল বা ব্যর্থ বা জরাগ্রস্থ – সেখানে সৃষ্টিশীল তারুণ্য তাদের মেধা ও আধুনিক কলাকৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
রক্ত সরবারহের ব্যবস্থার কথাটাই ধরুন- এখন এর একটি ভাল উৎস হচ্ছে বিভিন্ন তারুন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ‘ব্লাড ব্যাংক’। এই ব্লাড ব্যাংক গুলো মুলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর সদস্যের এক একটি তথ্য ভাণ্ডার – যেগুলোকে ব্যবহার করে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। এতে রক্ত দাতারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা প্রণোদিত- প্রায় সকলেই তরুণ-ফলে এটা এর বিকল্প ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
রাজধানী ঢাকাসহ নানা শহরে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশুদের মাঝে শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেবার জন্য বিভিন্ন তরুন সংগঠনের অবদান চোখে পরার মত। রাষ্ট্র যেখানে এগিয়ে যেতে পারেনি, সেখানে তরুণরা ঝাঁপিয়ে পরেছে তাদের সীমিত সামর্থ্য অথচ অসামান্য মনোবল নিয়ে। তারুণ্য এখানে সৃষ্টিশীল। তারা ব্যবহার করেছে উন্নত প্রযুক্তি, সমন্বয় করছে নানা ধারণার, খুঁজে বের করছে অর্থ যোগানের নানা কৌশল। তারা ব্যবহার করেছে উন্নত প্রযুক্তি, সমন্বয় করছে নানা ধারনার, খুঁজে বের করছে অর্থ যোগানের নানা কৌশল।
একই রকম প্রয়াস চলছে দেশের আনাচে কানাচে, দুর্গম পাহাড়ে, সুবিধা বঞ্চিত জনপদে, অবহেলিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে। তারুণ্য তার মানবিক মাতৃ রূপের বর্ণচ্ছটায় আলোকিত করছে, দূর করছে অন্ধকার। অনেক তরুণ প্রতিষ্ঠা করছে স্কুল, দাতব্য প্রতিস্থান- ব্যক্তিগত বা দলীয় উদ্যোগে।
নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের তারুণ্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে দ্বিধাহীন ভাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা দুর্গম এলাকার বিশেষ প্রয়োজন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত সরবরাহ হচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত সাড়া দিচ্ছে তরুণ সমাজ। তারা পৌছাতে পারছে স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে, যথাযথ সাহায্য নিয়ে। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটা ভাল বিকল্প হয়ে উঠছে যেখানে সাধারণ জনগনের আস্থার জায়গাটা অনেক স্থানেই বেশী শক্তিশালী।
এই পথ ধরেই এখন দেশের নানা স্থানে ঘটে যাওয়া অনাচারের তথ্য উঠে আসছে যোগাযোগ মাধ্যমে – প্রচার পাচ্ছে মিডিয়াতে, ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকার পাবার পথ সুগম হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে তরুণ সমাজ।
সনাতন ধ্যান ধারনার বাহিরে- অনেক ক্ষেত্রে তারুণ্য অবদান রাখছে। বাংলাদেশের সংগীত জগত- বিশেষ করে আধুনিক সংগীত- মূলত বিশ্বের সাথে এগিয়ে চলছে কিছু তরুণের অপরিসীম প্রচেষ্টার ফলে। একই কথা প্রযোজ্য ‘ফটোগ্রাফি’ এর ক্ষেত্রে। অনেক রাষ্ট্রীয় সন্মান এসেছে এই তরুণদের হাত ধরে। দেশে অনেক মেধাবী তরুণরা চলচ্চিত্র নির্মাণে দেখিয়াছে দক্ষতা।
তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সম্প্রসারন, রফতানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তরুণদের ভুমিকা কিংবদন্তীতুল্য। এই খাত হতে পারে বাংলাদেশের আয়ের মূল উৎস।
কাজেই দেখা যাচ্ছে- তরুণ সমাজই বর্তমানে দেশের উদ্ভাবনের, মানবিক স্পন্দনের ও সামাজিক সমস্যা সমধানের এক বিরাট বিকল্প শক্তি। বিশেষ করে রাষ্ট্র যেখানে জরাগ্রস্ত ও অনেকটা স্থবির। নেতৃত্ব যেখানে ক্ষমতা লিপ্সু, রাজনীতি যেখানে পথভ্রষ্ট, তারুন্য সেখানে আশা ভরসার স্থল। সুস্থ সবল, নির্ভীক, সৎ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, স্বপ্নচারী তারুণ্যের জয় হোক।