Joint initiaves necessary to handle compliance issues in rising plastic industry: Dr Moazzem

Published in রাইজিংবিডি  on Monday, 29 February 2016

অর্থনীতির বিকাশমান খাত প্লাস্টিক শিল্প

Plastic1456711186নিয়াজ মাহমুদ : ‘আগেরকার দিনে পশুর দাঁতের তৈরি চিরুনি ব্যবহৃত হতো। অবশ্য খুব দামি ছিল। তখন সবার পক্ষে চিরুনি ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না। এ পণ্যটি সাধারণত: জমিদাররাই ব্যবহার করতেন। আর এখন তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের চিরুনি। দামও কম। সবাই ব্যবহার করতে পারে। এমনকি মানুষের পকেটে পকেটে এখন চিরুনি থাকে।’

 

এভাবেই বলছিলেন আব্দুল মজিদ। যার বয়স সত্তোরের কোটায়। তার কথার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন আব্দুল মজিদের পুত্রবধু সোনিয়া বেগম।

এই গৃহিনী বলেন, শুধু চিরুনি নয়-ঘরে ব্যবহৃত জিনিষের মধ্যে এখন অধিকাংশই প্লাস্টিকের। এমনকি ঘরের রেফ্রিজারেটরটিও কিন্তু প্লাষ্টিকের। এছাড়াও খেলনাসামগ্রী থেকে শুরু করে মানুষের জীবনযাত্রার প্রায় সব রকম প্রয়োজন মেটাচ্ছে প্লাস্টিকসামগ্রী।

 

প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার প্রসঙ্গে একই পরিবারের সদস্য মো. মনির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখন যেন সব কাজেই এ পণ্যের ব্যবহার হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে উদ্যোক্তারা তৈরি করছেন প্লাস্টিক পণ্য। এরমধ্যে রয়েছে সেচ পাইপ, পলিথিন, ড্রামসিডার প্যাকেজিংসহ অনেক কিছুই। এক কথায় বর্তমান দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্লাস্টিক পণ্য।’

 

আব্দুল মজিদের পরিবারের ন্যায় গ্রাম-শহরের প্রায় সব পরিবারেরই প্লাস্টিক পণ্যের ওপর নির্ভশীলতা বাড়ছে। শুধু দেশেই না, বিশ্ববাজারেও বাড়ছে বাংলাদেশি প্লাষ্টিক পণ্যের চাহিদা।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প। অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে দেশের এ খাতটি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও মার্কিন বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকা সত্ত্বেও এ শিল্পের রপ্তানি আয় বাড়ছে। উদীয়মান এ খাতটি এতটাই এগিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারক দেশ।

 

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক শিল্পের মতো আনুকূল্য পেলে প্লাস্টিক পণ্য দেশের চাহিদা পূরণ করে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমই) সূত্রে জানা গেছে, দেশে ছোট বড় প্রায় ৫ হাজার কারখানা রয়েছে। যার ৬৫ শতাংশ ঢাকার মধ্যে ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম, ১০ শতাংশ নারায়নগঞ্জ ও বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য বিভাগে রয়েছে।

বিপিজিএমই সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ খাত থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে কাঠের বিকল্প প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মানুষের। এখাতে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক শিল্পে পণ্য বৈচিত্রকরণ, বহুমুখীকরণসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে এ শিল্প খাতে রপ্তানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।

প্লাস্টিক শিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশেই যদি কাঁচামাল উৎপাদন করা যায়, তবে একদিকে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় কমবে। ফলে পরনির্ভরতা কমবে। উপরন্তু কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশলের (ইএমএস) যথাযথ বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক ক্ষতিকর নয় বরং প্লাস্টিকের কৌশলগত রিসাইক্লিং করতে পারলে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ১৩০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এবং এর ৭০ শতাংশ (প্রায় ৯০ টন) রিসাইকেল হয়ে নতুন পণ্য হিসেবে বাজারে ফিরে আসছে।

এদিকে এ খাতকে আরো গতিশীল করতে সরকার মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিক কারখানাগুলো স্থানান্তর সম্ভব হবে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে পুরান ঢাকাবাসী। নিশ্চিত হবে উন্নত কর্ম পরিবেশ।

এ খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্তি পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এখন আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতারা কিছু কিছু প্লাস্টিক পণ্যও কিনছেন। তারা যখন পুরোদমে প্লাস্টিক পণ্য ক্রয় কিনবেন তখন তাদের কাছে কম্প্লায়েন্স ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই কম্প্লায়েন্স ইস্যুকে সামনে রেখে উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

একইসঙ্গে দেশে ৬৬ শতাংশ ছোট কারখানা রয়েছে যারা বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত হতে পারছে না। যে সব কারখানার উৎপাদন ব্যয় বেশি। তাদের দিকেও সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়াও টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও দক্ষ মানব সম্পদ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলে এ খাত আরো গতিশীল হবে বলে মনে করেন এই গবেষক।