সুমন আফসার
একসময় দেশের কৃষিজাত পণ্যের অন্যতম রফতানি খাত ছিল পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চা। পরে এর সঙ্গে যোগ হয় হিমায়িত খাদ্য। রফতানিতে সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করেছিল এ পণ্যগুলো। কিন্তু বর্তমানে সঠিক নীতিগত সহায়তা, পণ্যের বৈচিত্র্য ও বিপণনে দক্ষতার অভাবের কারণে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে এ খাতগুলো।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলত বিকল্প পণ্যের কাছে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি। হিমায়িত খাদ্যের ক্ষেত্রে রফতানি কমে যাওয়ার বড় কারণ মান নিয়ন্ত্রণের অভাব। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা না থাকা। আর স্থানীয় চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও মান পতনের কারণেই রফতানি কমছে চায়ের।
বিষেশজ্ঞরা বলছেন, এ তিন খাতের পণ্য রফতানিতে যে ধরনের প্রবৃদ্ধি হওয়া উচিৎ ছিল, বাস্তবে হয়েছে তার চেয়ে কম।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ১০৩ কোটি ডলারের। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১১ কোটি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭৮ কোটি ৭৯ লাখ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৫২ কোটি ৪১ লাখ ডলারের।
২০১২-১৩ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রফতানির হয় ৫৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৫৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতে রফতানি হয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে হয় ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের।
২০১২-১৩ অর্থবছরে চা রফতানি হয় ২৪ লাখ ডলারের। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৩৩ লাখ ৮০ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩২ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১ কোটি ২৩ লাখ ডলারের।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয় প্রায় ৪২ কোটি ডলারের। ওই সময়ে ১৪ লাখ ডলারের চা ও প্রায় ৩৮ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রফতানি হয়। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক রফতানি ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিক রফতানিতে কৃষিপণ্যের ভূমিকা সামান্য। এর পেছনে পণ্যের বহুমুখীকরণ, গুণগত মানের অভাব, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণ সর্বোপরি কৃষি খাতের অনাধুনিক ও অনুন্নয়নই মূল কারণ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোসহ অন্যান্য উন্নত দেশে হিমায়িত চিংড়ির যে চাহিদা রয়েছে, তার পরিমাণ বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। এছাড়া শাকসবজি, ফলমূল, ফুল, কাঁকড়া, পান-সুপারি, সুগন্ধি চাল, বাঁশ-বেত পণ্যও রফতানি হচ্ছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, এসব খাতে রফতানির পরিমাণ বাড়লেও সামগ্রিকভাবে দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধির তুলনায় তা কম। বিভিন্ন ধরনের বাধার কারণেই পিছিয়ে পড়ছে খাতগুলো। এজন্য পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারোপযোগিতা উদ্ভাবন, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচারণায় গুরুত্ব দেয়াসহ আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও দরকার।
তৈরি পোশাক রফতানি ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থই এখন পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। তবে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের ফলে জনশক্তি রফতানির বাজার দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য রফতানির ওপর গুরুত্ব বাড়ানোটাই জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ জানান, এ খাতের উৎপাদন বাড়াতে ব্যক্তিগত উদ্যোগই বেশি। সম্প্রতি উদ্যোক্তাদের কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়াতে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। এর মাধ্যমে হিমায়িত খাদ্যের উৎপাদনশীলতা ও রফতানি আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।