Published in Banik Barta on Monday, 3 March 2014.
জিএসপি পুনরুদ্ধার
বিধি প্রণয়নে আটকে আছে পরিদর্শক নিয়োগ
বদরুল আলম
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধারে অন্যতম শর্ত ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ। মার্চের মধ্যে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা। তবে নতুন নিয়োগবিধি প্রণয়নের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় আটকে আছে পরিদর্শক নিয়োগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়োগবিধি প্রণয়নের পরও পরিদর্শক নিয়োগে আরো কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। ফলে মার্কিন সরকারের বেঁধে দেয়া সময় মার্চের মধ্যে অন্যতম এ শর্ত পূরণ হওয়া কঠিন। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হলে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতরকে অধিদফতরে রূপান্তর করায় পরিবদর্শক পদের সংখ্যা বেড়েছে। এতে পুরনো নিয়োগবিধি অনুযায়ী সরাসরি কোটায় পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য নতুন নিয়োগবিধি প্রয়োজন।
বর্তমানে অধিদফতরটিতে প্রথম শ্রেণীর সহকারী মহাপরিদর্শক সাধারণ সেফটি ও স্বাস্থ্য সহকারী মহাপরিদর্শক পদের সংখ্যা ১৭৮। এর মধ্যে ১১১টি সংরক্ষিত পদ রেখে বাকি ৬৭টিতে সরাসরি পরিদর্শক নিয়োগ করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীর শ্রম পরিদর্শক পদে বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে সরাসরি পরিদর্শক নিয়োগের কোনো বিধান নেই।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে কম সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিধি প্রণয়ন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর এ বিধি সচিব পর্যায়ের কমিটির অনুমোদন পাবে। প্রয়োজন হবে পিএসসির অনুমোদন। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে তা রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেবেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শ্রম অধিদফতরের মতামত নিয়ে নিয়োগবিধিটি এখন সচিব পর্যায় কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সচিব পর্যায় কমিটিতে অনুমোদন চাওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনো বেশ কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে।’
গত বছরের জুনে বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সুবিধা ফিরে পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০০ পরিদর্শক নিয়োগের কথা উল্লেখ করে দেশটি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও এতে সমর্থন জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের দুই মাসের মধ্যে ২০০ পরিদর্শক নিয়োগের ঘোষণা দেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেন, ‘সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে অ্যাডহক ভিত্তিতে পরিদর্শক নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পরিদর্শক নিয়োগে আইনগত বাধা রয়েছে। তার পরও আমরা মার্চের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে পারব বলে আশাবাদী।’
জিএসপি পুনর্বহাল নিয়ে আগামী মে মাসে শুনানি রয়েছে। তার আগে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে গৃহীত পদক্ষেপের হালনাগাদ তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন না হলে প্রধান শর্তই অপূর্ণ থেকে যাবে। এতে জিএসপি ফিরে পেতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সামনে সন্তোষজনক বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হবে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পুরো প্রক্রিয়ায় ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে যেকোনো পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পাশ কাটিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিদের্শনাও সরকার দিয়ে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় থাকলে পরিদর্শক নিয়োগে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
উল্লেখ্য, তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা ক্রেতাদের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে কারখানার নিরাপত্তা উন্নয়নে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান শীর্ষক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে কারখানা পরিদর্শন এবং এজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ পরিদর্শক নিয়োগ।