Published in Kaler Kantho on Sunday, 20 July 2014.
প্রতিদিন ৪১০ কোটি টাকার বোঝা
উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তুতি নেই
ফারজানা লাবনী
চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর), যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিদিন ৪১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের হিসাব বেঁধে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পরও ১৫ জুলাই পর্যন্ত উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নূ্যনতম প্রস্তুতি নেই এনবিআরের।
প্রস্তাবিত এবং চূড়ান্ত বাজেট প্রণয়নের পর আয়কর, শুল্ক ও মূসক (মূল্য সংযোজন কর) শাখার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজের অজুহাতে সরকারি খরচে বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। কম গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজে বিদেশ যাওয়া বাধ্যতামূলক না থাকলেও বাজেট-পরবর্তী সময়ে অনেকটা ছুটি কাটাতেই যেন এসব বিদেশ ভ্রমণ। এমনিক মূসক দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূসক দাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন না এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। এনবিআর সূত্র জানায়, সম্প্রতি আমেরিকা হয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখতে ব্রাজিল গিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা। আবার যেসব কর্মকর্তা বিদেশ না গিয়ে অফিস করছেন তাঁদের অনেকে কোনো রকমে দৈনন্দিন কাজ কার সেরে রোজার দিনে জ্যাম এড়াতে আগেভাগেই বেরিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এনবিআর চেয়ারম্যান দপ্তরে উপস্থিত থাকলে এ চিত্র ঠিক উল্টো হয়।
এনবিআর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণসংক্রান্ত অনেক বৈঠক স্থগিত হয়ে আছে। বিশেষভাবে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের অনুপস্থিতিতে রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। এতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এখনো রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত নির্দেশনা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছরে ঠিক কোন কৌশলে রাজস্ব আদায় হবে, তা জানতে পারছে না কেউ।
চলতি অর্থবছরে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে সরকারের। অনুদান ও বৈদেশিক ঋণে নেই নিশ্চয়তা। তাই বড় অঙ্কের এডিপি বাস্তবায়নসহ অর্থ সংগ্রহের দায় রয়েছে এনবিআরের কাঁধে। মোট ৫৯.৮ শতাংশ রাজস্ব বোর্ড থেকে সরবরাহ করবে- এমন হিসাব কষা হয়েছে। তাই অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এনবিআরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আব্দুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতিবারের মতো এত বড় লক্ষ্যমাত্রা এ যাবৎকালে কখনো এনবিআরকে দেওয়া হয়নি। তাই অর্থবছরের শুরু থেকেই এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত নতুন অর্থবছরের শুরুতে অনেক কর্মকর্তার একটু গা-ছাড়া ভাব থাকে। অনেকে আবার ছুটি কাটান। এবার ঈদ আসায় এ প্রবণতা বেশি বেশি দেখা যেতে পারে। এতে অর্থবছরের শেষ হিসাবে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে একগুচ্ছ নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর করতে নানা দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সময় নষ্ট না করে এখনই রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব হয়নি। এরপর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঘাটতি থাকলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।’
এদিকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আবারও জটিলতা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ আইন পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থা নিয়েছেন। সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী মূসক দিবসের মতো বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ভ্যাট আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। মন্ত্রীর এমন অবস্থানে ভ্যাট আদায়ে কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন এনবিআর ভ্যাট শাখার একাধিক কর্মকর্তা। তাই এনবিআর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে ভ্যাট আদায়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআর এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন ও পুরনো আইনের সমন্বয়ে এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে রাজস্ব আদায়ের কর্মকৌশল পৌঁছায়নি।