Published in দেশ রুপান্তর on Friday 1 May 2020
শিল্প-অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বর্তমানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির গবেষণা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো ছিলেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব এবং এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, কৃষি খাতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তরের সম্পাদকীয় বিভাগের অনিন্দ্য আরিফ
দেশ রূপান্তর : করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অভিঘাত নিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কার কথা। ইতিমধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজও ঘোষণা করেছে সরকার। অনেকেই বলছেন, করোনাকালে একবার বাজার হারালে দেশের শীর্ষ এই রপ্তানি খাতের বাজার ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ আর তৈরি পোশাক খাতের বাস্তবতাকে কীভাবে দেখছেন?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : বাংলাদেশের জন্য তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষত কর্মসংস্থানের সুযোগ, রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যবিমোচন ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা। তাই যেকোনো দুর্যোগে তৈরি পোশাক খাতের ওপর যদি কোনো প্রভাব পড়ে, তাহলে দারিদ্র্যবিমোচন এবং কর্মসংস্থানে এর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। করোনার কারণে সে আশঙ্কাগুলো আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, সংকটটা শুধু বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়, সংকটটা বৈশ্বিক। এর কারণে শুধু রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বা এর প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, ভারত অথবা চীন ও কম্বোডিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, আমদানিকারক দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশকে এড়িয়ে গিয়ে ব্যবসা অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপট খুব একটা নেই। খুব সীমিত আকারে দু-তিনটি বিষয় হয়তো এ মুহূর্তে রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, আমদানিকারক অল্প কিছু দেশে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে এ দেশগুলোতে অনেকে কর্মহীন হয়েছেন। তাই ভোক্তাপর্যায়ে যে পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে, সেটা বলা যাবে না। আবার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে চাহিদা সৃষ্টি হবে, সেটাও বলার মতো পরিস্থিতি নেই।
আমদানিকারক দেশ, যেমন : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন ও ইতালি করোনায় সর্বাধিক আক্রান্ত। সবাই আশঙ্কা করছেন, এসব দেশের করোনা-পরবর্তী স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরে আসার সময়টা দীর্ঘায়িত হবে। সুতরাং, বাজারে পণ্যচাহিদা স্বাভাবিক হয়ে যাবে, সে রকম পরিস্থিতি তেমন একটা নেই। সে ক্ষেত্রে অর্ডারের যে বড় চাহিদা সৃষ্টি হবে, সে রকম অবস্থা বোধকরি নেই। কিছু কিছু দেশে বাজার খোলা শুরু হয়েছে। যেমন জার্মানিতে দোকান খোলা শুরু হয়েছে। স্পেনে দোকান খোলা হবে। আবার কিছু দেশ, যেমন ভিয়েতনাম করোনার ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তারা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে পেরেছে। তারা কাজে যাওয়ার সুবিধাটা নিতে পেরেছে। সে অনুযায়ী, তারা রপ্তানির বাজারে কিছু সরবরাহ করার মতো অবস্থায় রয়েছে।
আমাদের করোনা প্রতিরোধের বিষয়ে দুর্বলতা ছিল। তাই আমরা করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু এ মুহূর্তে করোনা-ঝুঁকি রেখে কাজ শুরু করার মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে তৈরি হয়নি এবং অন্য দেশের বাজার খুলে গেছে, সে যুক্তিতে আমাদের বাজার খুলে দেওয়ার অবস্থা নেই। অন্যরা তাদের যোগ্যতার বিচারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে পেরেছে। আমাদের কিন্তু সে পরিস্থিতি নেই। যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হলো, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার কারণ হলো, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেটা কারখানার ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই। সেটা আমাদের অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গা থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার মতো জায়গায় আমরা নেই। বরং স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোই আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বের জায়গা পাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকার সঠিক সময়েই তৈরি পোশাক খাতের জন্য কিছু প্রণোদনা দিয়েছে। মজুরি-সংক্রান্ত, ব্যবসা শুরু করা-সংক্রান্ত, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে, আমদানিমূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে, রপ্তানি মূল্য দেরিতে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে, ইউটিলিটি বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটা তাদের ‘ক্যাশ ফ্লোর’ যে সমস্যা বা অপারেশনাল যে সমস্যা, সেটা মেটাতে সহায়তা করবে। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতে উদ্যোগগুলো নেওয়া সত্ত্বেও আগামী মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত যে বন্ধের সময়সীমা ছিল, তার আগেই কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। আমার ধারণা, এর ফলে স্বল্পমেয়াদি কিছু সুবিধা নিতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
দেশ রূপান্তর : লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই বারবার কারখানা খোলা-বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ শিল্পাঞ্চলগুলোতে আনা হয়েছে। পরিবহন ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে এভাবে শ্রমিকদের পথে নামানোয় শ্রমিকদের মাধ্যমে সমাজে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি বেড়েছে। বিষয়টিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর দায়িত্বহীনতা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। আপনি কী মনে করেন?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : দুটি বিষয়কে এক করে দেখা যাবে না। এখন যে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে কাজ করতে এসেছেন, সে দায় কিন্তু শ্রমিকদের একেবারেই নেই। শ্রমিককে যদি যথাসময়ে বেতন দেওয়া হতো, তাহলে তার শহরে আসার প্রয়োজন পড়ত না। মজুরি যদি অনলাইন বা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে সমস্যা হতো না। আমরা দেখছি যে, অনেক কারখানা মার্চ মাসেরই বেতন পরিশোধ করেনি। কারখানা কর্র্তৃপক্ষের উচিত ছিল শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি উপলব্ধি করে এক মাসমেয়াদি একটি পূর্ণ ছুটি পরিপালন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, তারা এক মাস ছুটি দিলেও তা স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক দেয়নি। ফলে যেমন শ্রমিকের দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, উপরন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রলম্বিত হয়েছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বয়সসীমা দেখে আমাদের আশঙ্কা হয় যে, এদের মধ্যে অনেক গার্মেন্টস কর্মী থাকতে পারেন। এখনো কারখানা যেভাবে চলছে, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি থেকে যাচ্ছে। এর দায় কিন্তু উদ্যোক্তা ও কারখানা মালিকদের নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কারখানা পরিদর্শন কমিটিকে কারখানা মালিকদের নিয়ম পরিপালন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
দেশ রূপান্তর : রপ্তানি খাতের মতোই ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের জন্যও বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু জিডিপিতে ১৪ শতাংশের বেশি অবদান রাখা কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ যেমন ৩ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি নয়, তেমনি কৃষি খাতে সরকারের প্রণোদনাও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকে। করোনার কারণে সম্ভাব্য মন্দায় কৃষি খাতের প্রণোদনা ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি কীভাবে দেখছেন?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : প্রথমত, আমাদের কৃষি খাতটি এখনো পর্যন্ত অন্যান্য খাতের তুলনায় স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও করোনা-পরবর্তী সময়ে সংরক্ষণ করা যায় না এমন পচনশীল কৃষিপণ্য : টমেটো, শসা, লাউ ইত্যাদি বাজারজাতকরণে সমস্যা তৈরি হওয়াতে অনেক কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন : হাওরাঞ্চলে পাকা ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে সাড়ে ১৭ লাখ টন করেছে। আমরা আশা করছি, সেটা যদি কৃষকদের কাছ থেকে উপযুক্তভাবে কেনা যায়, তাহলে কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। এ ক্ষেত্রে কৃষকের খাদ্যগুদামে গিয়ে সরাসরি ধান বিক্রি করার পরিবর্তে যদি উন্মুক্ত বাজারে খাদ্যগুদামের ট্রাক কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে, তাহলে কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে এবং খাদ্যগুদামের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটি একেবারেই হ্রাস করা যায়। সেই উদ্যোগটি এখন নেওয়া প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যায়, সরকার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ালেও সাত-আট শতাংশের বেশি অর্জন হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাল সংগ্রহ বেশি হয় এবং লাভটা চালকল মালিকদেরই বেশি হয়। সেজন্য ধানের আর্দ্রতা বজায় রেখে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে। ধানের আর্দ্রতা বজায় রেখে ধান কেনার ব্যাপারটি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার করোনার জন্য কৃষক ও খামারিদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। আমরা আশা করব, দ্রুততর সময়ের মধ্যে এ অর্থ কৃষক ও খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে পচনশীল কৃষিপণ্য যেন অগ্রাধিকার পায়। আর সরকার যে কৃষিঋণ কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে, সেটাও কৃষকের জন্য অনুকূল ভূমিকা রাখবে। দরকার হলো, সঠিক সময়ে কৃষকের মধ্যে এ ঋণগুলো বিতরণ করা। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ‘বিএডিসি’ থেকে সেচের মূল্যহার অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে। সেটিও হয়তো কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে। যারা বিদেশ থেকে কাজ হারিয়ে চলে এসেছেন, তাদেরও কৃষিকাজে যুক্ত করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে কৃষি খাত যেন সচল থাকে এবং কৃষি উৎপাদন যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
দেশ রূপান্তর : করোনা বিপর্যয়ের আগে থেকেই দেশের ব্যাংকিং খাতে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। বলা হচ্ছে, খেলাপি ও অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। এদিকে, ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন করোনা মোকাবিলায় প্রায় লাখো-কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সরকার কী ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বলে মনে করেন? সরকারের করণীয় কী?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : ব্যাংকিং খাতের প্রণোদনাগুলো মূলত ঋণনির্ভর। যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ক্রেডিট লাইন দিয়ে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকার দিয়েছে। একটি অংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে এবং বাকিটা ব্যাংকের ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপের ভিত্তিতে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বর্তমান বিচারে সরকারের যে রাজস্ব ক্যাপাসিটি ছিল, তার মধ্যে সীমিত সময়ের মধ্যে এই উদ্যোগগুলো নেওয়ার সুযোগ ছিল। মনে রাখা দরকার, এই যে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ, সেটা হয়তো একবারে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হলো, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্যাকেজগুলো এবং আয় নিরাপত্তার জন্য প্যাকেজগুলো। সেটির জন্য অর্থের সংস্থান করতে হবে। ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস চালু করা হয়েছে। ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট বা ‘ভিজিডি’ এবং ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং বা ‘ভিজিএফ’ কর্মসূচিও চলছে। নতুন অনেক পরিবারকে সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। যেখান থেকে স্বল্পমূল্যে চাল ও ন্যায্যমূল্যে পণ্য দেওয়া হবে। এই উদ্যোগগুলো যৌক্তিক। আরও ৭৬০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যারা কর্মজীবী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত তাদের ক্যাশ ইনসেটিভ হিসেবে এককালীন দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলো, এ ধরনের ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং দ্রুততর সময়ে তাদের কাছে এ অর্থ পৌঁছে দেওয়া। আমরা জানি, সরকার এ শনাক্তকরণ শুরু করেছে। প্রত্যাশা রয়েছে, সরকার দ্রুততর সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে এ শনাক্তকরণের কাজটি সম্পন্ন করে। তবে ব্যাংকের ওপর যারা নির্ভরশীল, তাদের এ মুহূর্তে ঋণের প্রয়োজন কম হবে। কেননা, এখনই ব্যবসায়ে যাওয়ার মতো চাহিদা খুব বেশি নেই। উৎপাদিত পণ্য দেশে এবং দেশের বাইরে বাজারজাত করে বিক্রির সুযোগ নেই। এখন ব্যাংকগুলোর কাজ হবে অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা। আর অ্যাসোসিয়েশনগুলোর কাজ হবে প্রত্যেকটি খাতের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা। তারা যেন এ তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায়। ব্যাংকগুলো যেন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই তালিকা অবলম্বন করে। যেন শুধু ব্যাংকগুলো ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপের ভিত্তিতে ঋণ না দেয়। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা যেন প্রাধিকার পান। সেটি যেন ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করে হয়, ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপের ভিত্তিতে না হয়। না হলে, যারা বড় ধরনের ঋণগ্রহীতা রয়েছেন, তাদেরই ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপের ভিত্তিতে পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।