Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Monday, 22 February 2016
অর্থনীতির মূল স্রোতে আসছে বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দারা
রিয়াদ হোসেন
বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি দেয়ার লক্ষ্যে বিজিএমইএ ইতিমধ্যে ২৯ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হবে। ওই সব প্রত্যন্ত এলাকার আরো মানুষকে ক্রমান্বয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করা হবে।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির ইত্তেফাককে বলেন, তাদের অর্থনীতির মূল স্রোতে আনতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরো অনেককেই প্রশিক্ষণ দিয়ে গার্মেন্টস খাতে চাকরি দেয়া হবে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, পঞ্চগড়ে প্রথম দফায় ২৯ জন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীকে তৈরি পোশাক খাতে কাজের বিষয়ে এক মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও সাতজন নারী। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পরিচালিত স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইআইপি) আওতায় এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালায় বিজিএমইএ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোজয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, দীর্ঘদিন ছিটমহলে থাকায় এসব এলাকার অধিবাসীরা অর্থনৈতিক ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এখন তাদের গার্মেন্টসে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা একটি শুভ উদ্যোগ। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি দেয়ার এ উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকার এসব মানুষ শহুরে জীবনের সঙ্গে যাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সেটিও দেখা দরকার। এক্ষেত্রে তাদের বাসস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ওইসব এলাকায় যারা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো কাজের সুযোগও তৈরি করা দরকার।
কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ অংশে থাকা ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৫৪ হাজার বাসিন্দা নিজ দেশেও পরবাসী জীবন কাটিয়ে আসছিলেন। সীমানা জটিলতায় বাংলাদেশ কিংবা ভারত-কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব ছিল না তাদের। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অনেক মৌলিক ও নাগরিক অধিকার থেকেই তারা ছিলেন বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উভয় দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটবাসীর এ পরবাসী জীবনের অবসান ঘটে গত বছরের পহেলা আগস্ট। ১১১টি ছিটমহল অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে। ওই বাসিন্দারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পান। এ ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্বতন ছিটমহলগুলোতে সম্ভাবনার এক নব দিগন্ত খুলে যায়। তবে এ এলাকার মানুষের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন অর্থনৈতিক মুক্তি।