Professor Mustafizur Rahman on lacklustre investment and excess liquidity, published in Arthoniti Protidin on Thursday, 6 February 2014.
ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য উদ্বৃত্ত
অর্থনীতি প্রতিবেদক
ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে ৯৫ হাজার ৫৮০ কোটি ৭১ লাখ টাকার তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় বছর আগে দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্যের প্রকট সংকট ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার ঠিক বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে প্রয়োজনীয় তারল্য সংরক্ষণের পর ব্যাংকিং খাতে ৯৫ হাজার ৫৮০ কোটি ৭১ লাখ টাকার তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৪১ হাজার ২০৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, রাষ্ট্রীয় খাতের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে এক হাজার ৬১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ৪৩ হাজার ৬৬৩ কোটি ৫৬ লাখ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে নয় হাজার ৯৮ কোটি এক লাখ টাকার তারল্য রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী ব্যাংকে ২০ হাজার ৯০ কোটি, জনতা ব্যাংকে ১১ হাজার ৬২ কোটি ৬২ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকে নয় হাজার ৪১ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে এক হাজার ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার তারল্য পড়ে রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদায়ী বছরে দেশে বিনিয়োগে মন্দাভাব থাকায় ব্যাংকিং খাতে অধিক হারে তারল্য বেড়ে গেছে। বিনিয়োগ না থাকায় ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে নতুন যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে তাদের অধিক হারে সুদ গুনতে হবে, যা উৎপাদন খরচকে বাড়িয়ে দিলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে সামগ্রিকভাবে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা রয়েছে, এর মধ্যে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা নগদ রয়েছে। সে হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোট অর্থের ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ তারল্য। গত ১৭ অক্টোবর শেষে ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৭৯ হাজার ৬৬৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে আড়াই মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে ১৫ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার তারল্য বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ হারের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহারের পর ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার স্বার্থে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি) চলতি মূলধন ও মেয়াদি আমানতের ওপর যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকের কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এতে মেয়াদি আমানতের ওপর বর্তমানে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে মোট বিনিয়োগের বেশির ভাগ আসে ব্যাংকিং খাত থেকে। গ্রাহকের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। তাই ব্যাংকগুলো আমানত নিরুৎসাহিত করতে সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। যদিও নতুন ব্যাংকগুলো টিকে থাকার জন্য অতিরিক্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া অন্যান্যা ব্যাংক কিছুদিন আগেও যেখানে আমানতে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ গুনেছে, সেখানে বর্তমানে নয় থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের (এফডিআর) নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেও গ্রাহকদের সুদ হার কমানোর নোটিশ করা হচ্ছে।
ব্যাংকারদের মতে, ব্যাংকগুলো সব সময় উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১৩ সাল জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে আশঙ্কাজনকভাবে বিনিয়োগ কমে গেছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ কয়েকটি ব্যাংকের বড় বড় জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। এতে ব্যাংকের মুনাফা কমে যাওয়ায় এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।