Professor Mustafizur Rahman on plummeting remittance

Professor Mustafizur Rahman underscores decreasing overseas employment a cause of lowered growth of remittance in last four months, published in The Daily Sangbad, on 7 November 2013.

চার মাসে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমছে ১২ শতাংশ : অর্থনীতির জন্য নতুন শঙ্কা বলছেন বিশেষজ্ঞরা


অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
মাঝ খানে দুটি ঈদ ও পূজা থাকা সত্ত্ব্বেও অর্থবছরের চার মাসে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগামিতা লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে রেকর্ড গড়লেও শেষ সময় এসে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজন বলছেন বিশেষজ্ঞরা।বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম চার (জুলাই-আক্টোবর) মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার কম।জনশক্তি রপ্তানি হরাস, খোলা বাজার ও ব্যাংকে ডলারের বিনিময় হারে পার্থক্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে মন্দা, প্রবাসী শ্রমিক ফিরে আসা, হুন্ডি তৎপরতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তাদের আশঙ্কা।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৪০ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অথচ গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এসেছিল ৫০১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্সে প্রবাহ কমেছে ৬০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বা ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ।

গত অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই মাসে এসেছিল ১৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় এবার ২১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার (১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ) রেমিট্যান্স কম এসেছে।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১০২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ের তুলনায় ১৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার (১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ) কম এসেছে।

চলতি বছরের আগস্টে রেমিটেন্স এসেছে ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৭ কোটি ডলার কম। একইভাবে এ বছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উদ্বেগজনক হারে জনশক্তি রপ্তানিতে হরাস, এর পাশাপাশি খোলা বাজারের চেয়ে ব্যাংকে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ মন্দা, বিদেশ থেকে অব্যাহত হারে শ্রমিক ফিরে আসা, হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি বিশেষ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, উদ্বেগজনক হারে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়া। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রায় ৩৭ শতাংশ জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে রেমিট্যান্সের প্রবাহে ভাটা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে যত্রতত্র খোলা বাজারে ডলার কেনা-বেচা চলছে। আর ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের মূল্য তিন টাকারও বেশি। এছাড়া, বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে জানান ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আর তাই বিদেশ থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তারা রাজনৈতিক মন্থরতার কারণে ভেবে চিন্তে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে যা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।