Professor Mustafizur Rahman on progress in alleviating poverty, published in The Daily Bartoman on Wednesday, 23 October 2013.
দারিদ্র্য নির্মূলে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি
রিমন রহমান : সম্প্রতি বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দারিদ্র্য নির্মূলে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। ২০১০ সালের সমীক্ষায় দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৫ ও ২০ শতাংশ। তবে চলতি বছরে এ হার যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। প্রতিবছর ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
দারিদ্র্য ঘুচাও, বৈষম্য রুখো— ইশতেহারে এমন স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। ক্ষমতার শেষ প্রান্তিকে এসে নেমে এসেছে দারিদ্র্যের সংখ্যাভিত্তিক সূচক। সরকারের দেয়া ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা সাড়ে চার কোটিতে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা এই সরকারের শুরুতে ছিল সাড়ে ছয় কোটি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান দারিদ্র্য নির্মূলে সরকারের প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেছেন, ২০১০ সালের হিসেবে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ ও চরম দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের চিত্র পাওয়া যায়। এরপর আর হিসাব করা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রতিবছর দারিদ্র্য হ্রাসের হার হচ্ছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এটি হিসাব করলে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা অর্জিত হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসের যে প্রবণতা তৈরি হয়, সামনের দিনগুলোতে তা কঠিন হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে সরকার যে কর্মসূচি নিয়েছে তা ইতিবাচক। তবে শহরতলি, বস্তিবাসী ও চর এলাকার মানুষের দারিদ্র্য নির্মূলে কাজ করতে হবে; যা কিছুটা কঠিন।
দারিদ্র্য নির্মূলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে ড. মোস্তাফিজ বলেন, শুধু খাবারের নিশ্চয়তা দিলেই হবে না, পুষ্টি বা খাবারের গুণগতমানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে আয়-বৈষম্য হ্রাসের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আয়-বৈষম্য দূর না হলে একটি শ্রেণী আবারও দারিদ্র্যের কঠিন জাঁতাকলে পিষ্ট হবে।
সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া পাঁচটি খাতের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন একটি। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বিভিন্ন কর্মসূচির সংখ্যা বাড়ায়। চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৭৩ কোটি টাকা। এই খাতে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।
নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালে দারিদ্র্যের সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারের প্রতিটি বাজেটেই এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ত্বরান্বিত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
দারিদ্র্য জয়ের লক্ষ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রয়ণ, গৃহায়ণ, আদর্শ গ্রাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এছাড়া বয়স্কভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, সুবিধাভোগীদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথাও বলা হয়। এছাড়া কর্মসংস্থান ব্যাংকে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করার কথা বলা হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন কর্মসূচির ফলে দেশে দারিদ্র্য কমেছে। কমেছে আয়-বৈষম্য এবং বেড়েছে শ্রমের মূল্য। ইতিমধ্যেই গ্রামের ৩০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ও দেশের প্রায় ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারকে সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের আওতায় আনা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হতদরিদ্র্য মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের দিকে আরো বেশি জোর দিতে হবে। সরকার থেকে মাঝে মাঝে নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অর্থের সংস্থান করা হলেও স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তাদের নেই। এ লক্ষ্যে দিনমজুর এবং প্রান্তিক চরবাসীর জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হলে তারা নিজেরাই কর্মক্ষম হতে পারবে। দিনমজুর এবং চরবাসীর নিরাপত্তায় পুঁজি গঠনে ‘ক্ষুদ্র ঋণ বরাদ্দ’ এবং ‘ক্ষুদ্র স্বাস্থ্য বীমা’ চালুর বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে নতুন কোনো কর্মসূচি যোগ হয়নি। তবে চলমান কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে উপকারভোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্র মতে, ৯০’র দশকে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৮ শতাংশ। ২০০০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশ। ২০০৫ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশ।