লিংকন শহিদ
Email: lincolnsh@yahoo.com
অনেক বছর আগের কথা। বাংলাদেশ দল যাবে এশিয়ান গেমসে। তখন অবশ্য এশিয়াড বলা হত। আমার এক বন্ধু লন টেনিস খেলত। বেশ বাজে খেলোয়াড়। তার বাবা বেশ বড় আমলা ছিলেন। তখন সামরিক শাসন। শাসকদের একটি প্রিয় খেলা ছিল এই লন টেনিস। তাই বাংলাদেশ লন টেনিস দল সব ধরণের প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। তখনও ‘অংশ গ্রহণই বড় কথা’ এই খেলোয়াড় সুলভ মন্ত্রে অবিচল ছিল বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা। ফলাফলও ছিল ওই একই – ‘ঘোড়ার ডিম’। আমার বন্ধুটি তার বাবার কাছে আবদার করলো যেন উপরের মহলে চেষ্টা করে তাকে যেন বাংলাদেশ লন টেনিস দলের একজন সদস্য করে দেয়া হয়। (বাস্তবতার নিরিখে এই রকম দলভুক্তি একেবারে অসম্ভব ছিল না- এখনও অসম্ভব না- জাতীয় ফুটবল দলের গোলকিপারটাকে স্মরণ করুন!!)। কিন্তু পিতা রাজি হলেন না। এশিয়াড শুরু হল- যথারীতি বাংলাদেশ টেনিস দলের সব খেলোয়াড় সরাসরি ৬-০, ৬-০ সেটে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিল।বন্ধুটি রেগে আগুন-আমি কি এর চেয়ে খারাপ খেলতাম?
সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সাফল্য দেখে আমাদেরও মনে হয়েছে –কিভাবে এই ধরনের বড় মাপের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়, কিভাবে খেলা বাছাই করা হয়, কোন বিচারে খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়–সেটা বোঝা দরকার। কেননা দেশের সাধারণ অথচ সংবেদনশীল কোটি মানুষের একটা মন আছে, দেশের মান সন্মান বলে একটা বিষয় আছে। আর কত অপমান মুখ বুজে সহ্য করা যায়। এমন খেলা কেন বাছাই করা হয় যাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত মান নেই, এমন ক্রীড়াবিদ কেন পাঠানো হয় যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত যোগ্যতা নেই? এর পিছনে রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হয় না?
বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে এশিয়ায় পঞ্চম। ১৬ কোটি মানুষের দেশে একটা ব্রোঞ্জ পদক পাবার মত কোন ক্রীড়াবিদ নেই। ভুল বললাম, অষ্টম হবার মতও ক্রীড়াবিদ নেই। এটা কি শুধু রাষ্ট্রের ব্যর্থতা? ক্রীড়া সংগঠকদের ব্যর্থতা? না- সমগ্র জাতির ব্যর্থতা । একটি, কেবল মাত্র একটি পদক পাবার জন্য ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাই যথেষ্ট। হ্যাঁ, আমি তাই বিশ্বাস করি। একজন নিজস্ব প্রচেষ্টা দিয়ে, শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে একটি পদক অর্জন করতে পারে। এই রকম উদাহরণ সারা পৃথিবীতে অসংখ্য আছে। একবার আফ্রিকার দিকে তাকিয়ে দেখুন- পদক এসেছে মুলত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। ভারতে অনেক উদাহরণ পাবেন।
বাংলাদেশে এই রকম হয় না কেন? আমরা কি মননে মেধায় এতই দুর্বল? মোটেও না। আমরা অনেক মেধাবী। তবে অকাজে। আমরা খেলা দেখতে ভালবাসি কিন্তু নিয়ম মেনে খেলতে ভালবাসি না। ভালো ফুটবল খেলা দেখতে ভালবাসি, আবেগে ভেসে যাই, সমর্থনে সম্পদ ও জীবন অনিষ্ট করি। কিন্তু প্রকৃত ফুটবল খেলতে পারি না। কেননা ভাল ফুটবল খেলতে গেলে টীম ওয়ার্ক লাগে-পরিশ্রম করতে হয়। একলা খেলা যায় না। আমরা জাতি হিসেবে অলস ও দুষ্টবুদ্ধি সম্পন্ন। যে খেলায় জিততে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়- তা আমাদের দিয়ে হয় না। আমাদের দরকার বুদ্ধির খেলা। আমাদের প্রিয় খেলা- রাজনীতি- সীমাহীন গলাবাজি, মিথ্যাচার, প্রতারণা আর দুর্নীতি। এই খেলায় আমাদের কেউ হারাতে পারে না- আমরা তাই দুর্নীতিতে অনেক বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। বরাবরই শীর্ষ স্থানীয় জাতি।
নাকি ভুল বললাম- আমার এক বন্ধু মনে করিয়ে দিল যে- এক বিশেষ ধরনের বিশ্ব প্রতিযোগিতাতে বাংলাদেশ নাকি অনেক পদক পায়- তাহলে কি আমরা জাতি হিসেবে আসলে অলস বা দুষ্ট প্রকৃতির নই- আমরা কি তাহলে মানসিক বা শারীরিক ভাবে বিকারগ্রস্থ জাতি??