Published in সংবাদ on Friday, 14 October 2016
চীনের প্রকল্প অর্থায়ন
বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভাবনা
সংবাদ: চীনের সঙ্গে চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের কতটুকু লাভ হবে বা এর অর্থনৈতিক প্রভাব কি হবে?
মোস্তাফিজুর রহমান: চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি হলে বাংলাদেশের অবশ্যই লাভ হবে। কেননা এসব প্রকল্পের মধ্যে জ্বালানি, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা দূর হবে। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে। কস্ট অফ ডুয়িং বিজনেস কমে আসবে।তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রকল্পগুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন না হলে আমাদের প্রত্যাশিত রিটার্ন আসবে না। সব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং সাশ্রয়ীভাবে করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ চালাতে হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।
সংবাদ: চীনের সঙ্গে প্রায় ২৫টিরও বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি ডলারের ওপরে বিনিয়োগ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে, এতবড় বিনিয়োগ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটুকু সক্ষম বলে আপনি মনে করছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: দেখুন, আমরা ইতোমধ্যেই বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখনও করছি। সুতরাং আমাদের ক্যাপাসিটি রয়েছে। তবে সেই ক্যাপাসিটিতে কিছু ঘাটতিও রয়েছে। এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। যারা প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ, যারা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছে, চীনের সঙ্গে যে প্রকল্পগুলোর চুক্তি হবে সেগুলোতে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া চুক্তির বিষয়গুলোও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
সংবাদ: চুক্তির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে কিংবা কোন বিষয়ে নজর রাখতে হবে বলে মনে করছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: প্রকল্প থেকে রিটার্ন নির্ভর করছে কি শর্তে আমরা বিনিয়োগ পাচ্ছি তার ওপর। এক্ষেত্রে যে চুক্তিগুলো হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে দেখতে হবে আমাদের লাভ কতটুকু হবে। আমাদের সুবিধা ও লাভ আগে দেখতে হবে। এজন্য তাদের সঙ্গে স্মার্ট নেগোসিয়েশন করতে হবে। সব কিছু আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হবে।
সংবাদ: স্মার্ট নেগোসিয়েশন বলতে কি বুঝাচ্ছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: স্মার্ট নেগোসিয়েশন বলতে প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আলাপ করে সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু নেয়াকেই বুঝিয়েছি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। তাই চুক্তি করার সময় দেখতে হবে প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হচ্ছে কিনা। সুদের হার কি হচ্ছে। এক্ষেত্রে যতটা পারা যায় কম সুদে নিতে হবে। রিটার্নের সময় কতটুকু হচ্ছে। যতটা পারা যায় বেশি সময় রাখতে হবে। গ্রেস পিরিয়ড কতটুকু হবে, যতটুকু পারা যায় বাড়িয়ে রাখতে হবে। প্রকিউরমেন্টের পদ্ধতি কি হয়, তার শর্তগুলো আমাদের পক্ষে কতটুকু হয়েছে। আমাদের দেশ থেকে যেসব জিনিস কেনা যায় তা আমাদের এখান থেকে নিতে হবে। তাদের দেশ থেকে কিনতে হলে তা যেন সহজ শর্তে হয়। প্রযুক্তির হস্তান্তার যাতে হয়।
সংবাদ: অভিযোগ রয়েছে চীনের কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। তারপরও চীনের সঙ্গেই এতগুলো প্রকল্প চুক্তি করা কতটুকু যৌক্তিক?
মোস্তাফিজুর রহমান: শুধু চীনের প্রকল্প বাস্তবায়নেই বিলম্বিত হয় এমনটা নয়। আইএমই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট প্রকল্পের ৫০ শতাংশই বিম্বিত হয়। আর এর জন্য সময় বাড়ে এক তৃতীয়াংশ। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বিদেশিদের অর্থ সংশ্লিষ্টতা থাকে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু শর্ত থাকে, সেগুলো মানা হয় না। ফলে প্রকল্প বিলম্বিত হয়। এছাড়া কোন না কোনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়ে যায়। হয় জমি একোয়ার করতে পারে না, নয় অর্থ ছাড় হয় না, টেন্ডার নিয়ে সমস্যা হয় ইত্যাদি নানা কারণ রয়েছে। সুতরাং আমি আগেই বলেছি এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে প্রকল্প ডকুমেন্টে যেসব শর্ত থাকবে তা যাতে ভালোভাবে লেখা থাকে। শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে লেখা থাকতে হবে। ভালো হয় যদি ডিসপিউট রেজুলেশনও করা যায়।
সংবাদ: প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আমাদের কোন পদ্ধতি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মনে করছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: এক্ষেত্রে আমাদের তুলনামূলক সুবিধা হয় এমন সিদ্ধান্তই নিতে হবে। যে ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা নাই সেগুলো তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া যায়। যেগুলোতে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে বিওটি করা যেতে পারে।