Published in সমকাল on Friday, 6 May 2016
ধারাবাহিক উন্নতি রফতানি আয়ে
সমকাল প্রতিবেদক
রফতানি খাতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রফতানি বেড়েছে আগের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেশি হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। একক মাস হিসেবে এপ্রিলে রফতানি বেড়েছে গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
কয়েক মাস ধরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। মূলত তৈরি পোশাক খাতেই নির্ভর করেই রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মোট রফতানির ৮৩ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। তবে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য প্রধান কয়েকটি খাতের পরিস্থিতি ভালো নয়। এ তালিকায় রয়েছে, চা, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক, সবজি ইত্যাদি। অবশ্য দশ মাসে রফতানি বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে ওষুধ, কাঁচা পাট, প্রকৌশল পণ্য, ফার্নিচার ইত্যাদি।
ইপিবির তথ্য মতে, গত ১০ মাসে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে দুই হাজার ৭৩৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এর মধ্যে দুই হাজার ২৬৪ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এ খাতের ওভেন থেকে আয় এসেছে এক হাজার ১৯০ কোটি ডলার। এ আয় এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাকের অন্য খাত নিটের রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৪ কোটি ডলার। গত একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। প্রথমবারের মতো লক্ষ্যমাত্রা থেকে রফতানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ০২ শতাংাশ। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের সামর্থ্যের তুলনায় পোশাকের রফতানি এখনও কম। তৈরি পোশাক রফতানিতে আরও ভালো করার সামর্থ্য রাখেন উদ্যোক্তারা। বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। চীনের ছেড়ে দেওয়া বাজার দখলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় বিশ্বপোশাক বাজারে বাংলাদেশের বর্তমান অংশীদারিত্ব বর্তমানের ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। এ পরিপ্রেক্ষিতেই ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে সমাপ্ত এপ্রিলে রফতানি হয়েছে ২৬৮ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এপ্রিলের লক্ষ্যমাত্রা ২৬৭ কোটি ডলার থেকে এ আয় শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
রফতানি খাতের উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে চামড়ার রফতানি কমেছে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ খাতের রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিএফএলএলএফইর সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের মনে করেন, মূলত চামড়া শিল্প স্থানান্তর নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই চামড়া রফতানিতে এ করুণ দশা নেমে এসেছে। সমকালকে তিনি বলেন, চামড়ার বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। কমপ্লায়েন্স শর্ত পূরণ না হওয়ায় ইইউ এখন চামড়া নিচ্ছে না।
সার্বিক রফতানিপ্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, রফতানি খাতে পোশাকনির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে পোশাকবহির্ভূত প্রচলিত এবং অপ্রচলিত দুই খাতেই গত কয়েক মাস ধরে ওঠা-নামা চলছে। পোশাকবহির্ভূত প্রচলিত খাতের রফতানি কমে আসার কারণ হলো আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে যাওয়া। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হারের প্রতিকূলতাও এজন্য কিছুটা দায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে এসব খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।
অন্যদিকে পোশাকবহির্ভূত অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, এসব পণ্য আসলে বিশ্বের ছোট ছোট অপ্রচলিত বাজারেই রফতানি হয়ে থাকে। কোনো কারণে এসব পণ্যের দর বাড়লে ক্রেতারা বিশ্বের যেখানে কিছুটা কম দামে পণ্য পাচ্ছেন সেখানেই যাচ্ছেন।