পোশাক খাতের সংকট মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে শ্রমিকদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে

https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/232639881390325/

 

চলমান করোনা ভাইরাস সৃষ্ট মহামারির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এ মন্দার ফলে দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগের যোগানদাতা, তৈরি পোশাক খাত একটি বড় ধরনের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে শ্রমিক, মালিক ও সরকার – এই তিন পক্ষকেই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী কাঠামোতে শ্রমিকদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সংকট মোকাবেলায় কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।

উপস্থাপনা ডাউনলোড করুন 

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৭ম বার্ষিকী উপলক্ষে ২৩ এপ্রিল ২০২০ বৃহষ্পতিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত “কোভিড-১৯: সংকটের মুখে শ্রমিক ও মালিক – সরকারি উদ্যোগ ও করণীয়” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে এ সকল পরামর্শ উঠে আসে। ফ্রেডরিখ-ইবার্ট-স্টিফটাং (এফইএস), বাংলাদেশ অফিসের সহযোগিতায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। চলামান মহামারির কারণে রপ্তানি আয়ের উপরে যে প্রতিঘাত পড়েছে তার ফলে শ্রমিকদের জীবনমানের ওপর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা নিরসনে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠন ও শ্রমিকদের মাঝে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেরিতে বেতন প্রদান, পূর্ণাঙ্গ বেতন না হওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই এবং লকডাউনের সময়ে কারখানা খোলা রেখে শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এসবের ফলে শ্রমিকরা ও তাদের পরিবার এই দুর্যোগের মাঝে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। একইসাথে, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কারখানাগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। রানা প্লাজার ঘটনা বিবেচনায় রেখে দেশের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জন্য দুর্যোগকালীন সেবার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এ অনুষ্ঠানের সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাময়িক টানাপোড়েন চলছে, কিন্তু তাতে করে এই দুই দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। বর্তমানে রপ্তানিখাতে যে স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে, ভবিষ্যতে তা কাটিয়ে উঠে ব্যবসার সুযোগ ধরে রাখার প্রতি উদ্যোক্তাদের মনোযোগী হতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি, এই ভার্চুয়াল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই মন্দার মাঝে পোশাক খাতের কার্যাদেশগুলো যেন অন্য দেশগুলোতে চলে না যায় সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের দরকষাকষি অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আপাত এই সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সকল পক্ষকেই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সহ-সভাপতি জনাব আরশাদ জামাল দীপু অনুষ্ঠানের সম্মানিত আলোচক হিসেবে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা ও কারখানার মালিকগণ বৈশ্বিক এই মহামারির ফলে সৃষ্ট সংকট গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে। এই অভিজ্ঞতা সবার জন্য নতুন। রানা প্লাজার মত ট্রাজেডি ছিল জাতীয় পর্যায়ের সংকট কিন্তু এখন আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মুখে পড়েছি। এজন্য হয়তো কিছু সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা ও কারখানা মালিকগণ দেশের আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবে।

জনাব আমিরুল হক আমিন, সভাপতি, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (এনজিডব্লিউএফ) অপর সম্মানিত আলোচক হিসেবে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা ও বকেয়া বেতন-বোনাস দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার কথা বলেন। এছাড়াও শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে নাজমা আক্তার, জলি তালুকদার, বাবুল আক্তার, তাসলিমা আক্তার এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।