Professor Mustafizur Rahman and Dr Debapriya Bhattacharya on LDCs, published in Samakal on Friday, 6 December 2013.
ডবি্লউটিও সম্মেলন: এলডিসি ঘোষণার অনুমোদন চেয়েছে বাংলাদেশ
জাকির হোসেন, বালি (ইন্দোনেশিয়া) থেকে
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) ঘোষণা অনুমোদনের জন্য সংস্থাটির সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে দোহা উন্নয়ন এজেন্ডা এগিয়ে নিতে বালি-পরবর্তী একটি পথনকশা প্রণয়নের আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্মেলনের মূল কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের না আসায় তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন নগরী বালির নুসা দুয়া কনভেনশন সেন্টারে গত সোমবার ডবি্লউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলন শুরুর আগের দিন সোমবার এলডিসি মন্ত্রীদের বৈঠকে ৪৯টি এলডিসি একটি অভিন্ন অবস্থানে পেঁৗছায়। ওই বৈঠকে একটি ঘোষণা অনুমোদিত হয়, যেখানে উন্নত দেশে এলডিসির সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, এলডিসির জন্য সেবা খাতে ছাড়, রুলস অব অরিজিন শিথিলের মতো বিষয় রয়েছে। এবারের সম্মেলনে মূলত তিনটি বিষয়ে একটি মতৈক্যে পেঁৗছানোর মাধ্যমে বালি প্যাকেজ চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। এগুলো হলো_ বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) বিষয়ে চুক্তি, কৃষি ভর্তুকি বিষয়ে সমঝোতা ও এলডিসিগুলোর সুবিধা। তবে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় বাণিজ্য সহজীকরণ নিয়ে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নে ভারতের অনড় অবস্থান কৃষি ইস্যুতেও সমঝোতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় অন্তত এলডিসি প্যাকেজ বাস্তবায়ন হলেও তা হবে বাংলাদেশের জন্য অর্জন।
বালিতে অবস্থানরত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, ‘উন্নত ও বিকাশমান উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার বিরোধে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন প্রয়োজন বালি প্যাকেজের মধ্য থেকে এলডিসির সুবিধার বিষয়টি আলদা করে আনা। তাহলে অন্তত এলডিসিগুলো কিছু পাবে।’
একই ধরনের অভিমত প্রকাশ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডবি্লউটিওর মহাপরিচালক আজেভেদো বড় দেশগুলোর ওপর চাপ রাখার জন্য এলডিসির সুবিধার বিষয়টি বাকি দুই বিষয়ের সঙ্গে জুড়ে রেখেছেন। যদি কোনোভাবেই সমঝোতা না হয়, তাহলে হয়তো এলডিসির জন্য আলাদা ঘোষণা অনুমোদন হতে পারে।’
২০০৫ সালে ডবি্লউটিওর হংকং সম্মেলনে সকল উন্নত দেশ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেবে। যেসব দেশ ১০০ ভাগ পণ্যে এ সুবিধা দিতে পারবে না তারা অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে এ সুবিধা দেবে। কিন্তু এ সুবিধা গ্রহণের আট বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ বালি সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ আশা করছেন, বালি প্যাকেজ গৃহীত হবে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের অনুকূলে ডবি্লউটিওর বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব চুক্তি প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতির মেয়াদ পুনরায় বাড়ানোর জন্য সদস্যদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় বর্ধিত বাজার সুবিধা প্রাপ্তির ওপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।