Published in বণিক বার্তা on Friday, 18 December 2015
অর্থবছরের ৫ মাস
পাকিস্তান থেকে রফতানি আয় কমেছে ১৫%
বদরুল আলম
পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি বাবদ বাংলাদেশের বার্ষিক ব্যয় ৫০ কোটি ডলারের বেশি। এর বিপরীতে দেশটিতে পণ্য রফতানি করে আয় হয় ৬ কোটি ডলারেরও কম। ফলে দুই দেশের মধ্যে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গেছে। সম্প্রতি আরো কমে গেছে দেশটি থেকে রফতানি আয়। এতে বছর শেষে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য ঘাটতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পাকিস্তান থেকে রফতানি আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। এ সময় দেশটিতে পণ্য রফতানিবাবদ আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৭ দশমিক ৮৫ ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয়ের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৫০৭ দশমিক ৮৯ ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রফতানি হওয়া পণ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওভেন ও নিট পোশাক, হোমটেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, চামড়াজাত পাদুকা, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য।
রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা রয়েছে। এ সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারে রফতানি গন্তব্য বা বাজারভিত্তিক গবেষণা প্রয়োজন। এতে পাকিস্তানসহ অন্যান্য বাজারে চাহিদা রয়েছে, এমন পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানো সম্ভব হবে।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের রফতানি পণ্যের তালিকা খুব বড় নয়। তাই সব দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ সম্ভব হয় না। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তা রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে পাকিস্তান থেকে দেশের রফতানি আয় কমতে থাকলেও দেশটি থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে ঠিকই। দেশটির রফতানি খাতের শীর্ষ ১০ গন্তব্যের একটি হলো বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৬০ ধরনের পণ্য।
পাকিস্তানের বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য বেশি আমদানি করে তার মধ্যে আছে— তুলা, সুতা, কাপড়, গম, কেমিক্যাল, প্লাস্টিক উপকরণ, ফল, চামড়া, মূলধনি যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, চাল, মসলা, মাছ, পেট্রোলিয়াম পণ্য, পোশাক ও আসবাব। এছাড়া পাকিস্তানি শিশুখাদ্য, জুস, কাটলেরি ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে এ দেশে। এসব পণ্য আমদানিবাবদ বছরে বাংলাদেশের ব্যয় হয় প্রায় ৫৫ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাকিস্তান থেকে পণ্যগুলো আমদানি হচ্ছে মূলত বেসরকারিভাবে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা বাস্তবায়নে এখানে কোনো পক্ষেরই কিছু করার নেই। তবে পাকিস্তান আমাদের রফতানির জন্য সম্ভাবনাময় বাজার। তাই আমাদের সামর্থ্য বাড়িয়ে এ বাজার ধরার চেষ্টা করা উচিত। আর রফতানি আয় কমে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের রফতানি সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।