Published in দৈনিক ইনকিলাব on Saturday, 5 December 2015
অর্থনীতি গতি হারাচ্ছে : রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে
মুনশী আবদুল মাননান
অর্থনীতির গতিমন্থরতায় অর্থনীতিবিদরা বিচলিত। তাদের মতে, অর্থনীতির গতি ইতোমধ্যেই খানিকটা মন্থর হয়ে গেছে। এক ধরনের স্থবিরতা অর্থনীতিতে নেমে আসছে। তাদের দাবি ও বক্তব্যের সাবুদ হিসাবে তারা উল্লেখ করছেন, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো ভালো সংকেত দিচ্ছে না। রফতানিতে স্থিতিশীলতা নেই। এক মাসে বাড়ছে তো আরেক মাসে কমছে। আমদানিতে বাড়ছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। রেমিট্যান্স প্রবাহ আশানুরূপ নয়। বৃদ্ধির বদলে হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমছে। শিল্প উৎপাদন সূচকেও দেখা যাচ্ছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি।
তথ্য মতে, বছরের শুরুতে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। পারে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় এবং অক্টোবর পর্যন্ত তা ছিল ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের আমদানির যে তথ্য দিয়েছে তাতে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে আমদানির প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। পুঁজিপণ্যে আমদানি প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক, ২০ শতাংশ। পুঁজি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ। দেশের মোট আমদানির সবচেয়ে বড় অংশই হচ্ছে শিল্পের কাঁচামাল। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যত টাকার ঋণপত্র খোলা হয়েছে তার ৪০ শতাংশ শিল্পের কাঁচামাল। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, ৫৭ শতাংশ। রেমিট্যান্স আয়ে কোন প্রবৃদ্ধি নেই। আয় বরং কমেছে অক্টোবর পর্যন্ত ৩ শতাংশের মতো। শিল্পের উৎপাদন সূচকও নিম্নমুখী। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাক উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ, চামড়া পণ্যে ৭ শতাংশ, ওষুধে ৬ শতাংশ এবং সুতা ও বস্ত্রে ৪ শতাংশ। অন্য একটি জায়গাতেও নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। এই জায়গাটি হলো রাজস্ব আয়। রাজস্ব আয়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ হলেও আয় ঘাটতি ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
অনেকদিন ধরেই সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। বাজেট ঘাটতিও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন এই স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণে ভাঙনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, অর্থনীতিতে বিনিয়োগের কোনো চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে এক ধরনের দুশ্চিন্তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার মতে, এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে বিনিয়োগের যত ধরনের অনিশ্চয়তা আছে তা দূর করতে হবে। বলা বাহুল্য, বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সূচকগুলোর ফিলহাল প্রবণতা বিনিয়োগ স্থবিরতারই সাক্ষ্য বহন করে।
বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ওপর অর্থনীতির গতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি বিশেষভাবে নির্ভর করে। অথচ বহুদিন ধরে বিনিয়োগে এক ধরনের মন্দা বিরাজ করছে। দেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগযোগ্য অর্থের অভাব নেই। আবার বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও এদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ যথেষ্টই আছে। তারপরও বিনিয়োগে কোনো গতি সঞ্চারিত হচ্ছে না। প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে রয়েছে। তাদের অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। এই টাকা কয়েক বছরে জমা হয়েছে। তারা বসে আছে টাকা নিয়ে; কিন্তু বিনিয়োগকারীদের দেখা নেই। শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিতে কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না। দেশী বিনিয়োগে খরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও নিরুৎসাহিত করছে। তারাও মুখ ফিরিয়ে রাখছেন।
দেশী বিনিয়োগকারীরা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ না দেখালেও দেশের বাইরে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। দেশে বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করা, বিদেশে বিনিয়োগ উৎসাহ দেখানো এবং ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পাহাড় জমে থাকা অর্থনীতির যে চিত্র তুলে ধরে তা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থের সংকট নয়। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহহীনতা ও অনিচ্ছাই বড় সংকট হিসাবে দেখা দিয়েছে। উদ্যোক্তাদের কথা, তারা বিনিয়োগ করতে চান, প্রয়োজনীয় অর্থ প্রাপ্তির সুযোগও বিদ্যমান তবে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। এই পরিবেশের উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না। তাদের মতে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট বিনিয়োগে প্রধান বাধা। অন্যান্য বাধার মধ্যে আছে, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও পরিবহন সংকট, জমির অভাব, বিনিয়োগ-উদ্যোগ বাস্তবায়নে নানা বাধা ও দীর্ঘসূত্রতা, আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। অর্থনীতিবিদদের অনেকের ধারণা এবং উদ্যোক্তারাও মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন একটা বড় প্রতিবন্ধকতা।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিনিয়োগ স্থবিরতার জন্য অবকাঠামো দুর্বলতাকে দায়ী করলেও প্রাধান্য দিয়েছেন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে। অবকাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সক্ষমতা প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ১০৭। অবকাঠামো, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার বিচারে এটি নির্ধারণ করা হয়। আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভালো করছি কিন্তু আমাদের প্রধান দুর্বলতা হলো অবকাঠামো যথা- টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, সড়ক, রেল ইত্যাদি। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে কিংবা জমি রেজিস্ট্রেশন করতে দেড় থেকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। বহু উদ্যোক্তা কারখানা প্রতিষ্ঠা করেও গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছেন না। কিন্তু তাদের ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে। এর পর বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হলেও হয়তো তারা উৎপাদনে যেতে পারবেন না।’
জাহিদ হোসেনের মতে, ‘অবকাঠামোগত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।’ এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য : ‘নব্বইয়ের পর থেকে আমাদের এখানে এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা চলে আসছিল। বিনিয়োগকারীরা ভাবতেন, পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যে দল জয়ী হবে, তারা দেশ চালাবে। যে দল পরাজিত হবে, সে দল ‘মানি না, মানি না’ বলে আওয়াজ তুললেও তিন-চার মাস পর মেনে নিত। ব্যবসায়ীরা ধরে নিতেন আগামী তিন বছর মোটামুটি নীতিগত নিশ্চয়তা থাকবে। চতুর্থ বছরে গিয়ে আবার গোলযোগ হবে। আবার নির্বাচন হবে। বিজয়ী দল সব কিছু দখল করবে। পরাজিতরা ‘মানি না’ বলে আওয়াজ তুলবে। এই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীরা অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন কি বলা যায় ২০১৯ সালের আগে বা পরে কী হবে? এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কে বিনিয়োগ করবেন? অর্থনীতিবিদ কেইনসের মতে, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা এক নয়। ঝুঁকি থাকলে সেটি পরিমাপ করে মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া যায়। হিসাব-নিকাশ করা যায়। কিন্তু অনিশ্চয়তা থাকলে সেটি করা যায় না। অন্ধকারে ঢিল ছুড়তে হয়। তাই আমি মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও একটি বড় বাধা।’
দেশের অবস্থা এ মুহূর্তে কেমন, দেশবাসীর তা অজানা নেই। কোথাও শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নেই। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছে। এ যাবত ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের একটি ঘটনায়ও অকুস্থল থেকে কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি। তদন্তেরও কোনো অগ্রগতি নেই। সন্ত্রাসীরা-দুষ্কৃতীরা এখনো অধরা। প্রতিটি ঘটনার পরই সরকারি মহল থেকে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে নেমে পড়েছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে এবং তা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। গ্রেফতার নিয়ে বাণিজ্য চলছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি মহলের নিরবচ্ছিন্ন বাগবিস্তার ও বিষোদগার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানের ধূম্রজালের অন্তরালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রোমহর্ষক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনাগুলো। ঘাতক-সন্ত্রাসীরা এই অসিলায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই সঙ্গে আশংকা থেকে যাচ্ছে আরও হামলা ও নাশকতার। মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ভয়ভীতি ও শংকাতংক। এই অনিশ্চিত ও নাজুক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান সেদিন বলেছেন, যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, সামনে অনেক বিপদ রয়েছে। সরকারি মহল থেকে প্রায়ই বলা হচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা- ওই ষড়যন্ত্রের অংশ। ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমেরিকা জঙ্গী বানিয়ে এদেশে আসতে চায়। তাই আইএস’র নামে ষড়যন্ত্র করছে। এর আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। বাংলাদেশকে কোনোমতে অনিরাপদ ঘোষণা করা ও বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে, যদি এ ধরনের কিছু স্বীকার করানো হয়, তাহলে বাংলাদেশের ওপর তারা হামলে পড়তে পারে। এই যদি বাস্তবতা, তবে দেশের ভালো থাকার কোনো হেতু থাকতে পারে না। আর দেশ ভালো না থাকলে অর্থনীতি গতিশীল হওয়া, কিংবা দেশের এগিয়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব হতে পারে? দেশ আসলে এগোচ্ছে না, পিছিয়ে পড়ছে সব দিক দিয়েই।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এবং দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, সুশাসন, আইনের শাসন ইত্যাদি নিয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। দেশে প্রকৃতপক্ষে বিরাজনীতিকরণের একটা কূটকৌশলী তৎপরতা চলছে। পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শাসনের ক্ষেত্রে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা লক্ষণীয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ ছাড়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বলা হয়েছে, মত প্রকাশের সুযোগ কমে আসছে। আর মানবাধিকার পরিস্থিতি এসে ঠেকেছে তলানিতে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আলোচনাতেও একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি দেশে গণতন্ত্র সঠিক ধারায় প্রবাহিত হতো, রাজনীতির চর্চা নির্বাধ হতো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নির্ভয় হতো, মানবাধিকার নিশ্চিত হতো, আইনের শাসন সুদৃঢ় হতো এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটত, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। ঢাকায় হাঙ্গার প্রজেক্টের এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ভয়ের সংস্কৃতি রোধে দরকার গণতন্ত্র। বলাবাহুল্য, গণতন্ত্র যদি ফিরে আসে তাহলে সব ক্ষেত্রে প্রবাহিত হতে পারে সুবাতাস। স্বীকার করতেই হবে, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উপেক্ষিত হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে গণতন্ত্র যেমন মুক্তি পেত, রাজনৈতিক সংকটেরও সুরাহা হতো। সেই নির্বাচন এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। কবে হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা, কেউ বলতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বই প্রধান। সরকার সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেনি। সরকার বরং অংশগ্রহণবিহীন একতরফা একপক্ষীয় নির্বাচনের মধ্যেই গণতন্ত্রকে আটকে রাখতে চাচ্ছে। এতে আর যাই হোক, গণতন্ত্র আসবে না, রাজনৈতিক সংকটও মিটবে না।
রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হলেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। সবকিছুই তখন একটি সুধারায় ফিরে আসবে। অনিরাপত্তা, শঙ্কা, ভীতি ও আতঙ্কের অবসান ঘটবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশঙ্কা, দেশ নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র কোনো কিছুই আর থাকবে না। অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তার মেঘ দূরীভূত হলে অর্থনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। বিনিয়োগ হবে, উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং মানুষের জীবনমানের উন্নতি হবে। এই সহজ-সরল সত্য সরকার ও সরকারি মহল যত আগে বুঝবে, ততই দেশের মঙ্গল, মানুষের কল্যাণ।