Published in Banik Barta on Monday, 11 March 2014.
অর্থবছরের ৮ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৩.৯৬%
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে পণ্য রফতানি থেকে দেশে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪০ কোটি ৫ লাখ ২ হাজার ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত কয়েক অর্থবছরের একই সময়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেলেও চলতি অর্থবছর তা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৩৮ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। গত আট মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিই তার প্রমাণ। যদিও প্রবৃদ্ধির ধারা কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ১৩ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধিকে স্বাভাবিকই বলতে হবে। ২০১০-১১ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। এরপর বিগত দুই অর্থবছরে কমে এলেও এখন আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারলে অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে।
২০১০-১১ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আট মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাট ও কৃষি খাত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সব পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধির গতিই ইতিবাচক। এ চার অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬৮, ১৯ দশমিক ৩৩, ২৮ দশমিক ৫০ ও ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫১ দশমিক শূন্য ৪, ঋণাত্মক ১৩ দশমিক ৬৬, ৯ দশমিক ৬৪ ও ঋণাত্মক ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে হিমায়িত খাদ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১০-১১ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে এ পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৭৯, ৮ দশমিক ৫৪ ও ঋণাত্মক ১৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভাবমূর্তি সংকটে পড়ার পরও গত আট মাসে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এ পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৯৪ ও ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আট মাসে পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম বলেন, ‘রফতানি খাতের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক। তবে শুধু পোশাক খাত নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অচিরেই প্রবৃদ্ধিতেও এর প্রভাব দেখা যাবে। মাসভিত্তিক প্রবৃদ্ধি এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।’
ইপিবির মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোশাক খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২৬ দশমিক ১৩, ৫ দশমিক ৫১, ৪১ দশমিক ৫৮, ২ দশমিক ৯৩, ২৯ দশমিক ৫৪, ১৬ দশমিক ৭৭ ও ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে চামড়া রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১০-১১ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এ পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৫২ দশমিক ৬০, ১৭ দশমিক ২৭ ও ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় রফতানি বাণিজ্য এখন স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছে। এ গতি অব্যাহত রাখতে প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি মূল পণ্যগুলোর অপ্রচলিত বাজারগুলোয় অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে হবে।