Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Tuesday, 26 January 2016
বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিবন্ধিত বিনিয়োগ বেড়েছে আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৪৯ শতাংশ
আহসান হাবীব রাসেল
ধীরে ধীরে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। বিনিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে। তাছাড়া ব্যাংকের সুদ হারও কিছুটা কমেছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর জন্য সুদ হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আর দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়বে না।
বিনিয়োগ বোর্ডের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উদ্যোক্তারা ১৪ হাজার ৫৬২ কোটি ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করেছেন। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিনিয়োগের নিবন্ধন করেছেন ২১ হাজার ৬৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অর্থাত্ দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ।
বিনিয়োগ বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত বছরের শুরুতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিবন্ধন কমতে শুরু করে। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরের জানুয়ারি থেকে জুন-এ ছয় মাসে নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৫০ লাখ ১২ হাজার ডলার। অথচ আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ডলার। এ হিসাবে গেল বছরের শুরুর ছয় মাসে নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে যায়। কিন্তু এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে বিনিয়োগ নিবন্ধনও বাড়তে শুরু করেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো সুদের হার কিছুটা কমালেও এখনো তা অনেক বেশি। এত উচ্চ সুদে বিনিয়োগ লাভজনক করা সম্ভব নয়। সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে আসলে উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন। সুদ কমানোর পাশাপাশি অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। বিশেষ করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট না কাটলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়বে না। তাছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে হলে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা অর্জন করতে হবে। যা আমাদের দেশে খুবই কম।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেজন্য অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। পাশপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। এ বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একদিকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ; একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ। ফলে বাংলাদেশ এখন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্তসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে। এ সুযোগ থাকবে আরো দশ বছর। তাই কোনো বিনিয়োগকারী যদি এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে এ সুযোগ নিতে পারবে। তাছাড়া নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের নিজ দেশের বাজারও সম্ভাবনার একটি জায়গা। এসব বিবেচনায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ বিষয়গুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাছাড়া বিনিয়োগের জন্য গ্যাস-বিদ্যুত্ প্রাপ্তি এবং বিভিন্ন সনদ প্রাপ্তিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে। এতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়বে।