Published in Sangbad on Thursday, 30 January 2014.
বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ শতাংশ নির্ধারণ
জাফর আহমদ
চলতি অর্থবছরের শেষ অর্ধেকের (জানুয়ারি-জুন) জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ সাড়ে ১৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ভর করছে রাজনৈতিক সহিংসতা পরিবর্তি স্থিতিশীলতা আসলেও তা বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটুকু আস্থার ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়তা কিভাবে করা হচ্ছে তার ওপর।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের ১৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল; অর্জিত হয়েছে ১১ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সহিংস হরতাল-অবরোধের কারণে জুলাই-ডিসেম্বর অর্ধ বার্ষিকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেনি। আগে যে সব প্রকল্পগুলো শুরু করেছিল, সেগুলো কাজ করেছে মাত্র। ক্ষেত্র বিশেষে পূর্বে হাতে নেয়া প্রকল্পের কাজও শুরু করতে পারেনি। রপ্তানিকারকরা বিকল্প পথে রপ্তানি করতে গিয়ে লোকসান গুনছে। বিদেশি ক্রেতারা দেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশের বেসরকারি খাতের সব চেয়ে বেশি কর্মযজ্ঞ হয়ে থাকে ছোট ছোট ব্যবসা কেন্দ্রিক। সহিংস হরতাল অবরোধের কারণে তা স্থবির হয়ে পড়ে। অস্থিরতার কারণে বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল পরিশোধ করা, কর্মচারীর বেতন দেয়া ও নিজেদের নিত্যদিনের খরচ করলেও ব্যবসায়ীরা কোন কেনা-বেচা করতে পারেনি। এ কারণে কেউ কেউ কোনমতে ব্যবসা চালিয়ে নিলেও অনেককে বন্ধ করতে হয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি খাতের জন্য বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ১৬ শতাংশ অর্জিত হয়নি। গত ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতের জন্য ১৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যবসায়ীরা বর্তমান পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন চায়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা চায়।
বেসরকারি খাতের জন্য ১৬ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন। কিন্তু এর জন্য সরকারকে আরও উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিবর্তি যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বিদেশি ক্রেতারা আসা শুরু করেছে। আমরা উৎপাদন করছি। ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা হয়তো বিনিয়োগ শুরুও করেছে। কিন্তু বড় বিনিয়োগ করার জন্য আমরা রাজনীতিক ও সরকারের কাছ থেকে স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি চাই।
তবে বিদ্যুৎ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা উৎপাদনে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন এই উদ্যোক্তা। এজন্য যেসব কারখানা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করা আছে সেগুলোকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। যাতে অন্যরাও বিনিয়োগে উৎসাহী হয়।
অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের এক মাস চলে গেছে। এক মাসে কোন বিনিয়োগ হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয়নি। সামনে আছে ৫ মাস। এ সময়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতার বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনার দরকার হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, সহিংস হরতাল-অবরোধের কারণে যেসব ছোট ব্যবসায়ী লোকসানের কারণে কারখানা বা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে বা কোনমতে চালিয়ে গেছেন তারা আর নতুন করে বিনিয়োগ করার সাহস পাবে না। সহিংতা পরবর্তী রপ্তানিকারকদের যেভাবে প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকার এগিয়ে এসেছে এ সব ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রেও সেভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক সংবাদকে বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা বছরের প্রথমার্ধের মতোই রাখা হয়েছে। তবে অর্জন নির্ভর করবে আগামী পাঁচ মাস দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে তার ওপর। বছরের প্রথমার্ধে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বলা যায় এ সময়টা দেশ একটি ক্লান্তিকাল অতিক্রম করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় উৎপাদন-বণ্টন ব্যাহত, সরবরাহ ভেঙ্গে পড়েছিল। এ সময়টা অর্থনীতির জন্য খবুই খারাপ অবস্থা ছিল। এখন সেটা নেই। কিন্তু কতদিন থাকবে এ অবস্থা, আবার কোন বড় কর্মসূচি আসবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সেদিকে চেয়ে আছে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতের ১৬ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ভর করবে তিনটি বিষয়ের ওপর; প্রথমটি হলো- ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক সরকারি খাতের উন্নয়নমূলক কাজ আছে সেগুলো চালু হচ্ছে কি না; দ্বিতীয়টি হলো- হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলোকে সরকারি প্রণোদনা দেয়ার জন্য চিহ্নিত করে পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে কিনা এবং তৃতীয়টি হলো- নির্বাচন-উত্তর ফিরে আসা স্থিতিশীলতার ওপর ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি আস্থা এসেছে কিনা। এ সব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ১৬ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব।