Published in Arthoniti Pratidin on Tuesday, 28 January 2014.
আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে সড়ক উন্নয়নের তাগিদ
অর্থনীতি প্রতিবেদক
আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে দ্রুত চারদেশীয় (বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার) সংযোগ সড়ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। চীন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা সম্বন্ধে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চান তিনি। প্রয়োজন অনুযায়ী দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রীর যোগাযোগ ব্যবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন নিয়ে আগামী বর্ষার আগেই সেগুলোর মেরামতের কাজ এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেন রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের অধীনে যেসব রাস্তার কাজ চলছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে যোগাযোগমন্ত্রীকে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, বিসিআইএম গঠনে গত প্রায় এক দশক ধরে তত্ত্বীয় আলোচনা চলার পর গত বছর এ ফোরামের বিষয়ে আলোচনা গতি পায়। গত বছর চীন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি ও বেইজিং সফরেও এই ফোরামের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আগামী জুনে বাংলাদেশে বিসিআইএমের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্রমতে, এই ফোরামের আওতায় বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে চীনের কুনমিং থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যে সড়ক যাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওপর দিয়ে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিসিআইএম ফোরামের মোটর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
বিসিআইএম ফোরামের তথ্যমতে, চার দেশের মধ্যে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওই মোটর শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। কলকাতা সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মোটর শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া গাড়িগুলো।
জানা গেছে, বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে চীনের কুনমিংয়ে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয় বিসিআইএম ফোরাম। এরপর পাঁচ ফোরামে মোটর শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়। অবশেষে ১১তম ফোরামে এসে এ উদ্যোগ সফল হয়। এর পর থেকেই বিসিআইএমকে এগিয়ে নিয়ে জোর চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা করেন বিসিআইএমের বাণিজ্যমন্ত্রীরা। এ সময় ভারত ও মিয়ানমারের কিছু সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি জোর দেওয়া হয়। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ সংযোগ সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত। কিছু রাস্তার কাজ চলছে। এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান অর্থনীতি প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিসিআইএমের সড়ক যোগাযোগ চালু হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমদানি-রফতানিতে ব্যয় কমবে। বিনিয়োগ বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। আর কাজে লাগানোর মাধ্যম হচ্ছে কানেকটিভিটি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কারো বিরোধিতা করার কথা নয়। তবে রাস্তার ডিজাইন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা হচ্ছে। এজন্য কেউ ঘরে বসে নেই। চার দেশের সড়ক যোগাযোগ বাড়লে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। এজন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
বিসিআইএমের সংযোগ সড়ক বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে লাভবান হব আমরা। কারণ বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। অধিকাংশ পণ্য আমদানি করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ভারত থেকে আমদানি করতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ দিন। এতে একদিকে যেমন খরচ বাড়ে, অন্যদিকে মালামালও নষ্ট হয়। আর চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ চালু হলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য আসবে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। ভোক্তারাও কম দামে পণ্য কিনতে পারবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চার দেশের যেভাবে কানেকটিভিটি হচ্ছে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘এক ধরনের লোক আছে যারা সব সময় বিরোধিতা করে। আর যারা বিরোধিতা করে তারা কেউই ব্যবসায়ী নন। কানেকটিভিটি বুঝলে তাদের বিরোধিতা করার কথা নয়।’
এদিকে চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে নিয়ে আন্তদেশীয় সংযোগ ও বাণিজ্য ফোরাম বিসিআইএমকে এগিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে গোটা পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষের বসবাস। কিন্তু সেই তুলনায় এখানে বাণিজ্য কম। প্রধান সমস্যা হলো কানেকটিভিটি। তাই কানেকটিভিটি বাড়াতে বিসিআইএমকে এগিয়ে নিতে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।