নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা ও শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার নারী ও শিশুর কল্যাণে চলমান কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নারী ও শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০২৩-২৪ হতে ২০২৫-২৬ সময়কালের জন্য মধ্যমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় কর্মজীবী মায়েদের শিশু সন্তানদের জন্য ৬৪টি জেলায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি টাওয়াল প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ; কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান; নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল নির্মাণ; শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালন; কওমী মাদ্রাসা শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান; ‘নিরাপদ ইন্টারনেট ও নিরাপদ শিশু’ ইত্যাদি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ অনুসরণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুর অধিকার, নারীর জন্য শোভন কর্ম, নারী ও শিশুর নিরাপত্তা, শিশু বিকাশ ও কল্যাণ, নারীর জন্য স্মার্ট কর্মজগত এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর ক্ষমতায়নকে জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার ২০১০ সালের ৩৬ শতাংশ হতে বর্তমানে ৪২.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা বর্তমান সরকার আরো সুসংহত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিকৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ‘জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০০৬ সালে ছিল ৯১তম (১১৫টি দেশের মধ্যে), যা বর্তমানে উঠে এসেছে ৭১তম স্থানে (১৪৬টি দেশের মধ্যে)। এই প্রতিবেদন অনুসারে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে নবম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেন্ডার সম্পৃক্ত মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
নারীদের নিয়মিত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাইরে আত্মকর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। যার আওতায় ইতোমধ্যে ৬৪টি জেলার ৪৮৮টি উপজেলার ২ লক্ষ ২৭ হাজার নারীকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলের অধীনেও ৬৪টি জেলায় স্বকর্ম ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নারী ও শিশু নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ এবং ‘ওয়ান স্টপ সেল’ এর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া শিশু বিকাশ ও কল্যাণে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ৬টি জেলা শাখায় আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩৫,০০০ শিশু বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
প্রকাশকাল: জুন ২০২৩