Published in কালের কণ্ঠ on Monday, 28 March 2016
পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন
৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা কমিটি নেই
এম সায়েম টিপু
দেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধস। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো করছে দেশের বেশির ভাগ রপ্তানি আয়ের এই খাত। কিন্তু এত কিছুর পরও তিন বছর শেষে ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কোনো সেফটি কমিটি হয়নি।
আইন অনুযায়ী শ্রমমান যাচাইয়ে দেশের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এ পরিদর্শন কার্যক্রমের ভিত্তিতেই পোশাকশিল্পের ওপর সম্প্রতি একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ‘তৈরি পোশাক কারখানার কমপ্লায়েন্স ইস্যু বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সমন্বিত ফরম্যাটে পরিদর্শিত তথ্যের সারসংক্ষেপ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কোনো সেফটি কমিটি নেই।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে দুই হাজার ৪৯৫টি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে অধিদপ্তর। এর মধ্যে এক হাজার ৪০১টিই বিজিএমইএর এবং ৪৭৬টি বিকেএমইএর সদস্য। আর কোনো সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানা ছিল ৬১৮টি। এসব কারখানার মধ্যে এক হাজার ৭৩টি প্রতিষ্ঠানে কোনো সেফটি কমিটি নেই।
সূত্র অনুযায়ী, বিজিএমইএর সদস্য ৮৮৩টি কারখানায় সেফটি কমিটি আছে বলে পরিদর্শনে দেখা গেছে। এ হিসাবে পরিদর্শনকৃত বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর ৬৩ শতাংশ কারখানায় এই কমিটি রয়েছে। বাকি ৩৭ শতাংশের বা ৫১৮টির মতো কারখানায় এই কমিটি নেই। বিকেএমইএর সদস্য ৩১২টি কারখানায় সেফটি কমিটি আছে। এই হিসাবে ৬৬ শতাংশ কারখানায় এই কর্মসূচি আছে। আর বাকি ৩৪ শতাংশ বা ১৬৪টি কারখানায় সেফটি কমিটি নেই। বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য নয় এমন ৩৯ শতাংশ কারখানায় সেফটি কমিটি আছে। এই হিসাবে বাকি ৬১ শতাংশ বা ৩৭৭টি কারখানায় এই কর্মসূচি নেই।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কারখানার অন্যান্য সূচকের বিবেচনায় সেফটি কমিটি কিছুটা পিছিয়ে আছে। এটি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এর কারণ কারখানায় ধারাবাহিকভাবে শ্রমিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এই কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই কমিটিগুলোকে একই সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তাদের মাধ্যমে অন্য শ্রমিকদের সচেতন করার ব্যাপারে উদ্যোগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন অনুযায়ী কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে যেকোনো কারখানায় ৫০ জনের অধিক শ্রমিক থাকলেই সেফটি কমিটি বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক। তাই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেফটি কমিটি গঠনের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
সৈয়দ আহমেদ আরো বলেন, গঠিত সেফটি কমিটিরগুলো থেকে ১০০ কমিটিকে শিগগিরই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাঁর অধিদপ্তর থেকে। তাই কারখানার মালিকদের বিধি অনুসারে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন।
বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে বিধি পাস হওয়ার পর এই সেফটি কমিটির কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যেসব কারখানায় শ্রমিক সংঘ আছে সেসব কারখানায় এই কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর যেসব কারখানায় শ্রমিক সংঘ নেই সেসব কারখানায় পার্টিসিপেশন কমিটি কাজ করছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রতিবেদন অনুসারে আমরা সন্তুষ্ট। তার পরও আমরা আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই শতভাগ কারখানায় এই কমিটি বাস্তবায়ন হবে।’