Published in প্রথম আলো on Wednesday, 9 March 2016
নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আলোচনা
আব্দুল কাইযুম
নারী প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরের সব কাজ করছেন। কিন্তু এ কাজের কোনো স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন নেই। এক তথ্যে দেখা গেছে, নারীরা যেখানে মজুরিবিহীন কাজ করেন ছয় বা আট ঘণ্টা, পুরুষেরা সেখানে করেন এক ঘণ্টা বা দুই–আড়াই ঘণ্টা।
এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। এক হিসাব অনুযায়ী, নারীর দুই ঘণ্টা মজুরিবিহীন শ্রম কমলে শ্রমবাজারে তাঁর ১০ শতাংশ অংশগ্রহণ বাড়বে। পুরুষদের নারীর কাজে সহযোগিতা করা জরুরি। এতে নারীর অন্য কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ অনেক বাড়বে। নারীর আরও বেশি ক্ষমতায়ন হবে।
বাংলাদেশের নারীরা অনেক এগিয়েছেন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অবদান রয়েছে। এসব বিষয়েই আজকের আলোচনা। এখন আলোচনা করবেন বনশ্রী মিত্র নিয়োগী।
বনশ্রী মিত্র নিয়োগী
নারীর গৃহস্থালির কাজ নিয়ে এক দশক ধরে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা হচ্ছে। নারীর গৃহস্থালির কাজের সঙ্গে তাঁর মানবাধিকার, সহিংসতা, দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত। ব্যাপকভাবে গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে নারীর কোনো উন্নয়ন ঘটছে না। ফলে তাঁর জীবনে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
গৃহস্থালির কাজের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মূল্য রয়েছে। নারীর গৃহস্থালির কাজের সামাজিক স্বীকৃতি দিতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এখন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, মাত্রা ও ১১৭টি অংশীদার দেশব্যাপী মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে।
সিপিডির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস ও আমরা দেশব্যাপী আরেকটি গবেষণা করেছি। এখন আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা চাই, সরকারের নীতিতে এটা অন্তর্ভুক্ত হোক। আমরা প্রথমত এ কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন চাই।
অনেক নারী শ্রমবাজারে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। কিন্তু তঁার ঘরের কাজ এতটুকু কমছে না। নারীকে এখনো ঘরে–বাইরে সমানভাবে কাজ করতে হচ্ছে। নারীর কাজের এ বোঝা কমানো অত্যন্ত জরুরি। নারী-পুরুষ কাজের ভাগাভাগি হলে নারী আরও বেশি করে শ্রমবাজারে আসতে পারবে। নারীর মর্যাদাও বাড়বে। অনেক শিক্ষিত নারী সংসারে কাজের চাপে শ্রমবাজারে আসতে পারছেন না।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া দেখেছি। নারীর গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতির জন্য আমরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত এর একটা যৌক্তিক পরিণতি না আসে। সবাই সচেতন হলে এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবেই।
তৌফিকুল ইসলাম খান
নারী ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। এর অবশ্যই একটা মূল্য আছে। এ মূল্যটা বের করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আমরা ৬৪টি জেলায় কাজ করেছি। বিবিএস আমাদের সহযোগিতা করেছে। নীতিনির্ধারক মহলেও আমাদের এ কাজ গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী পরিসংখ্যান ব্যুরোকে নারীর মজুরিবিহীন কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও নারীর গৃহস্থালির কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। পুরুষেরা যেন নারীদের কাজে সহযোগিতা করেন, সে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন।
একটা পদ্ধতি থাকতে হবে, যার মাধ্যমে নারীর গৃহস্থালির কাজের মূল্যায়ন করা যায়। আবার সরকারি কাজে মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা যে ধরনের সুযোগ পান বেসরকারি ক্ষেত্রে তেমন পান না। আমাদের এক গবেষণায় দেখা যায়, জিডিপিতে নারীর অবদান ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হতে পারে।
একজন নারী মজুরিবিহীন কাজে আট ঘণ্টা ব্যয় করছেন। একজন পুরুষ এ কাজে ব্যয় করছেন মাত্র ২ দশমিক ৫ ঘণ্টা। আমাদের ২০১৩ সালের লেবার ফোর্স জরিপে দেখা যায়, পরিবারে বেতনবিহীন নারীশ্রমিকের সংখ্যা ৮৫ লাখ। এ ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা মাত্র ২০ থেকে ২১ লাখ। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় চার গুণ বেশি নারী পরিবারে মজুরিবিহীন শ্রম দিচ্ছেন।
ধীরে ধীরে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছিল। যেমন ২০১০ সালে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১৩ সালে এটা ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
বাংলাদেশ সবেমাত্র মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে। সামনে আরও অনেক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আসছে। বাংলাদেশে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা চার কোটির বেশি। নারীশ্রমিকের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি। আমরা এসব নারীকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না।
বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই নারী-পুরুষের এত ব্যবধান রেখে উন্নত পর্যায়ে যেতে পেরেছে। পুরুষেরা গৃহস্থালির কাজে সহযোগিতা করলে নারীর কাজের যেমন স্বীকৃতি হবে, তেমনি তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। শ্রমবাজারে তাঁদের অনেক বেশি প্রবেশ ঘটবে। দেশেরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
সায়মা হক
নারীরা পরিবারে দুই ধরনের কাজ করেন। এক. গৃহস্থালির কাজ। দুই. পারিবারিক শ্রমিকের কাজ। ২০১০ সালের এক হিসাবমতে, মোট নারীশ্রমের ৫০ শতাংশের বেশি পারিবারিক নারীশ্রম।
শ্রমবাজারে যেসব নারী মজুরিবিহীন আছেন, তাঁদের ২৪ শতাংশের প্রাথমিক শিক্ষা আছে। তাঁরা মজুরিভিত্তিক শ্রমবাজারে যেতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পরিবারপ্রধানের এমন অনেক কাজ থাকে, যা করতে তাঁকে অন্য মানুষকে বেতন দিয়ে রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ছেলের বউ বা মেয়েকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো মজুরি দিচ্ছেন না। এটাও একধরনের সমস্যা।
নারীদের বড় একটা অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ করেন, যেখানে তঁারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। আমরা এক জরিপে দেখেছি, একজন নারী গৃহস্থালি ও পারিবারিক শ্রমের কাজে দিনের প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্যয় করছেন।
এত সময় কাজ করার ফলে নারীর কর্মদক্ষতা ও স্বাস্থ্যের ভীষণ অবনতি হচ্ছে। এখন আমাদের জরুরি কাজ হলো মজুরিবিহীন কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া। এ কাজকে দৃশ্যমান করা। আমাদের যদি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই নারীদের শ্রমবাজারে আনতে হবে।
নারীরা কেন শ্রমবাজারে আসতে পারছেন না? বাধাগুলো কোথায়? সেটা খঁুজে বের করতে হবে। শিশু যত্নকেন্দ্রগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। শ্রমবাজারে আসার অনেক সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো, সন্তান দেখাশোনা করা। এর সঙ্গে বাল্যবিবাহের আরেকটা বড় সমস্যা রয়েছে। নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
মানসিকতা আরেকটি বড় সমস্যা। অনেক ছেলে বা পুরুষ ঘরের কাজে সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু তাঁরা ভাবেন, মানুষ কী বলবে? এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে না ভাবলে নারী শ্রমবাজারে আসতে পারবেন না। আবার তাঁর গৃহস্থালির কাজের কোনো স্বীকৃতি হবে না।
ফওজিয়া মোসলেম
দেশের ৩৩ শতাংশ নারী কৃষিকাজ করছেন। এখন অনেক পরিবারের পুরুষেরা বিদেশে থাকেন। এসব পরিবারের অধিকাংশ কৃষিকাজ এখন নারীরা করছেন। যেহেতু নারীর সম্পত্তিতে খুব একটা অধিকার নেই, তাই তাঁর এসব কৃষিকাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।
একটা ব্যাপকসংখ্যক নারী মজুরিবিহীন কৃষিকাজ করছেন। এ কাজের কোনো মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি নেই। কৃষি উৎপাদনের ওপর তাঁর কোনো অধিকার নেই। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দাবি ছিল, নারী কৃষকদের কৃষি কার্ড দেওয়া। তাহলে তাঁরা কৃষক হিসেবে চিহ্নিত হতেন। কিছুটা হলেও তাঁরা তাঁদের কৃষিশ্রমের মূল্য পেতেন।
দেশে অনেক নারী এখন চাকরি করেন। তাঁদের অধিকাংশের বেতনের টাকা খরচ করার এখতিয়ার নেই। স্বামীর ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ করতে হয়। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এমন হচ্ছে।
নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার কারণও এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষের মানসিকতা গড়ে ওঠে বাস্তব প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে। বাস্তব প্রেক্ষাপট হচ্ছে নারীদের কোথাও কোনো অধিকার নেই।
নারীকে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পদের অধিকার দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না। পুরুষ নারীর কাজে অংশগ্রহণ করবেন না। তাঁর শ্রমঘণ্টাও কমবে না। সব সময় মজুরিহীন থেকে যাবেন। কখনো তাঁর কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন হবে না।
তাই নারীর সম্পদ ও অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। যেখানে ১০০ জন নারী আছেন, সেখানে অবশ্যই দিবাযত্নকেন্দ্র থাকতে হবে। এমন দাবি আমাদের তুলতে হবে। আর এ কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। সব ক্ষেত্রে অধিকার ও সম্মান দিলে নারীর অনেক উন্নয়ন ঘটবে।
প্রতিমা পাল মজুমদার
নারীরা অনাদিকাল থেকে ঘরে–বাইরে নিরন্তর কাজ করছেন। কিন্তু এ কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। আলু চাষের ওপর কাজ করেছি। সেখানে দেখেছি নারীরা আলুচাষের সব ধরনের কাজ করছেন। এমনকি আলুর বীজ সংগ্রহের কাজটিও নারীরা করছেন। পুরুষ শুধু আলু নিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এই আলু বিক্রির কোনো অর্থ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী পাচ্ছেন না। শ্রমিক জরিপ সংস্থা পুরুষকেই আলুচাষি হিসেবে ঘোষণা করছে। সেখানে নারীর কোনো মূল্য থাকছে না।
অধিকারহীনতা নারীদের প্রধান সমস্যা। পারিবারিক সম্পত্তির ওপর নারীদের যথাযথ অধিকার দিতে হবে। সম্পত্তির ওপর সম-অধিকার অর্জিত না হলে নারীরা স্বীকৃতি ও সম্মান কোনোটাই পাবেন না।
প্রথমে নারীর প্রকৃত অধিকারের জায়গাটা ঠিক করতে হবে। নারীর কাজ ভাগাভাগির কথা বললেই হবে না। এর জন্য রান্নাঘরে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যখনই রান্নাঘরের পরিবেশ ভালো হবে, হটপট থাকবে, থালাবাসন ধোয়ার সহজ উপায় থাকবে তখন পুরুষেরা আরও বেশি কাজ করবেন। সে জন্য আমাদের রান্নাঘরের প্রযুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
পিকেএসএফ উন্নত মানের চুলা বানিয়েছে। হারিকেন বানিয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির চুলায় রান্না করা সহজ। পুরুষেরা নারীর কাজে সহযোগিতা করছেন। নারীর কাজের মূল্যায়নটা কঠিন হলেও কোনো না কোনোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়ন হলেই নারীর কাজের স্বীকৃতি আসবে। নারীর কাজের মূল্যকে জিডিপিতে আনার একটা পদ্ধতি বের করতে হবে।
আফজাল হোসেন
আমার প্রতিষ্ঠান মাত্রা। আমরা এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছি। আপনারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা আছেন। আপনাদের সমৃদ্ধ আলোচনা থেকে অনেক দিকনির্দেশনা ও মতামত আসবে। ভবিষ্যতে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে এগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, কখনো এটা দেখতে পাই, কখনো পাই না। আমার গ্রামের বাড়িতে একটি পরিবার থাকে। এই পরিবারের নারীসদস্যাটি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। সারা দিন ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তাঁর পাশের মানুষগুলো এসব ভালো চোখে দেখে না। এ সমস্যাটা সব জায়গায় রয়েছে। কালে কালে যুগে যুগে এটি ছিল। এ ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করে যেতেই হবে।
সংস্কৃতির চর্চা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলো সংস্কৃতির চর্চা দিন দিন বাংলাদেশে কমে আসছে। একজন মানুষ কাজ করলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সে কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। দুঃখটা হলো, এই স্বাভাবিক বিষয়টা অর্জনের জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
তবে আমরা আশাবাদী যে সবার কাজের ফলে এর একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে।
ফারাহ্ কবির
২০১২-১৩ সাল থেকে নারীর মজুরিবিহীন শ্রম নিয়ে গবেষণা করি। আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করি। গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলার মানুষের সঙ্গে আমরা কাজ করি। এ অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার নারীকে আমরা টাইম ইউজ ডায়েরি দিয়েছি। তাঁরা তাঁদের দৈনিক কর্মঘণ্টাসহ কিছু তথ্য ডায়েরিতে লিখে রাখেন। তিন বছর এ গবেষণা করেছি।
গবেষণায় দেখেছি, এ অঞ্চলের একজন নারী ছয় ঘণ্টা পরিবারের দেখাশোনার কাজ করেন। সেখানে পুরুষ এ কাজটি করেন এক ঘণ্টারও কম সময়। গড়ে একজন পুরুষ তাঁর বিনোদনের জন্য যদি ছয় ঘণ্টা ব্যয় করেন, সেখানে একজন নারী দুই ঘণ্টা ব্যয় করেন।
কাজের স্বীকৃতির অভাব তো আছেই, এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তাঁদের রয়েছে। সবাইকে শ্রমবাজারে যেতে হবে এমন নয়। তবে এমন একটা অধিকার তাঁর থাকতে হবে, যেন তিনি শ্রমবাজারে যেতে চাইলে যেতে পারেন। আমরা এটা চাই যে একজন নারী শ্রমবাজারে যাবেন কি যাবেন না, এই সিদ্ধান্ত যেন তিনি নিজেই নিতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে যেন পুরুষেরাসহ অন্য কোনো জায়গা থেকে বাধা না আসে। অনেক ক্ষেত্রে ছেলেসন্তান না হওয়া পর্যন্ত একজন নারীকে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে এ কাজটিও করছেন, আবার সংসারের অন্য সব কাজও করছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও তাঁর কোনো স্বীকৃতি নেই।
এখন নীতিনির্ধারক মহলে বিষয়টি জোরালোভাবে নিতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটা এসেছে। উন্নয়ন ফোরামে এ বিষয়টা বলা হয়েছে। এসডিজিতে আছে। সবদিক থেকে সচেতন হলে নিশ্চয়ই নারীর শ্রমের স্বীকৃতি ও সম্মান বৃদ্ধি পাবে।
সিমিন মাহমুদ
মেয়েদের অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। স্কুলে বেশি আসছে। মাতৃমৃত্যু কমেছে। তিনটি জায়গায় তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। এক. কম বয়সে বিয়ে। দুই. মেয়ে ও নারীদের ওপর সহিংসতা। তিন. স্বীকৃতিহীন গৃহস্থালির কাজ। মজুরিহীন কাজের একটা মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিন্তু এতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। কারণ, এটা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে না। শ্রমবাজারের সঙ্গে কোনো কাজ সম্পৃক্ত না হলে সেটা জিডিপিতে আসে না। সবার কাজের ফলে পরিবর্তন যে একেবারেই আসছে না, তা কিন্তু নয়। পরিবর্তন আসছে। অনেক পরুষ এখন নারীদের কাজে সহযোগিতা করছেন। গৃহস্থালির কাজের ফলে একজন নারী সার্বক্ষণিক কাজ করতে পারেন না। খণ্ডকালীন কাজ করতে হয়। গৃহস্থালির কাজের সঙ্গে যুক্ত নারীদের অধিকাংশ কম লেখাপড়া করেন। ফলে সব ধরনের কাজে তাঁরা যুক্ত হতে পারেন নাা। নির্দিষ্ট কিছু অল্প মজুরির কাজের মধ্যে তাঁদের থাকতে হয়। এসব বিষয় আমাদের ভাবতে হবে।
কথা বলার সময় ছেলেরা গৃহস্থালির কাজ করাকে খুবই ইতিবাচকভাবে নেন। তাঁরা বলেন যে হ্যাঁ গৃহস্থালির কাজ নারী-পুরুষ সমানভাবে করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা এটা করছেন না। আবার যেসব নারী শ্রমবাজারে কাজ করছেন, তাঁদেরও অনেকের কাজ স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি প্রচার করা। সবাইকে সচেতন করে তোলা।
হামিদা হোসেন
একটা কার্টুন দেখেছিলাম, একজন পরিদর্শক গৃহকর্তাকে জিজ্ঞেস করছেন আপনি কী করেন? তিনি কয়েকটি কাজের কথা বললেন। পরিদর্শক বললেন কোথায়, আপনার কোনো কাজ তো দেখা যায় না? তারপর বললেন, আপনার স্ত্রী কী করে? তিনি বললেন স্ত্রী কিছু করে না। আমাদের সমাজের অনেকেই এমন আছেন, স্ত্রী কী করে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তেমন কিছু করে না। অর্থাৎ স্ত্রী যে ঘরে কাজ করেন, সেটাকে তাঁরা কোনো কাজই মনে করেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন করা খুবই প্রয়োজন।
মেক্সিকোতে একটা সম্মেলনে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, নারীর স্বীকৃতি না হওয়ার কারণ হলো তাঁর কাজের স্বীকৃতি নেই। এই সম্মেলনের পর মেয়েদের কাজের কিছুটা স্বীকৃতি হলো। আরও বেশি করে মেয়েরা শ্রমবাজারে আসা শুরু করলেন। এর আরেকটি কারণ হলো, সস্তায় নারীশ্রম পাওয়া যায়।
দেশে দিন দিন নারীশ্রমের প্রয়োজন বাড়ছে। পোশাকশিল্পসহ কিছু শিল্প রয়েছে একান্তই নারীনির্ভর। শ্রমবাজারে নারীর গুরুত্ব বাড়তে থাকবে। কিন্তু পুরুষ যদি নারীকে কাজে সহায়তা না করেন, তাহলে নারীরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন না।
নারীকে আরও বেশি করে শ্রমবাজারে আনার জন্য সরকারের বিশেষ নীতিমালা থাকতে পারে। নারীদের জন্য বিদ্যমান যে আইনগুলো আছে এর কোনো পরিবর্তন দরকার হলে তা-ও করতে হবে।
শাহিন আনাম
নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ হচ্ছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য এগুলো হলো উপসর্গ। মূল সমস্যা হলো সমাজে নারীর প্রকৃত মর্যাদা নেই। নারীকে কীভাবে দেখা হয়। আমরা দেখেছি নারীর কাজের তেমন স্বীকৃতি নেই। আর স্বীকৃতি নেই বলেই তাঁর কোনো মর্যাদা নেই।
আমরা যাঁরা নারী আন্দোলনের সঙ্গে কাজ করি, আমরা চাই নারীর অবদান তুলে ধরতে। নারীর অবদান দৃশ্যমান হলে তাঁর সম্মান বাড়বে। সিপিডি এক বছর কাজ করে নারীর কাজের মূল্যায়ন করেছে।
পৃথিবীর সব দেশে নারীর মজুরিবিহীন শ্রম আছে, সব দেশে এটা আলোচনাও হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে বেইজিং সম্মেলনে ইউএনডিপি মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদন বের করেছিল। ২০ বছর আগে তারা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল বিশ্বের নারীদের মজুরিবিহীন শ্রমের মূল্য তিন ট্রিলিয়ন ডলার।
অনেক দেশ অনেকভাবে নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করছে। গৃহস্থালির কাজের একটা অর্থনৈতিক মূল্য আছে, তাহলে কেন আমরা এর মূল্যায়ন করব না। কোনো না কোনোভাবে এটা মূল্যায়ন করতে হবে এবং জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জিডিপিতে যা অন্তর্ভুক্ত হয় তার অবদান নারীর আছে। কিন্তু কোনো পার্থক্য করা হচ্ছে না কোনটি নারীর কোনটি পুরুষের। ফলে নারীর অবদান কোনোভাবেই বোঝা যায় না। এই হিসাবের বিষয়টিই আজকের আলোচনার বিষয়।
তৃণমূল পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে নারীরা যখন জেনেছেন তাঁরা এত কাজ করেন, তখন তাঁরা অবাক হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এত করি এত অবদান রাখি কখনো ভাবা হয়নি।
দেশের অনেক নারী কৃষির প্রায় অধিকাংশ কাজ করেন। কিন্তু ফসল বিক্রির টাকা পকেটে ভরেন কৃষক। কৃষক কী কখনো তাঁর স্ত্রীকে বলেন, কৃষি থেকে যা পেয়েছি এর অর্ধেক অবদান তোমার। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে স্বামী কি স্ত্রীকে গৃহস্থালির কাজের জন্য টাকা দেবেন? টাকা দেওয়ার প্রশ্ন না। তিনি যেন স্বীকৃতি দেন যে এত কাজ তিনি করছেন।
অনেকে বলেন, আপনারা এত দিন ধরে কাজ করছেন কিন্তু তেমন পরিবর্তন তো আসছে না। আসলে অনেক মানুষের দেশ এটি। পরিবর্তন আসতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমাদের পরিবর্তনের জন্য কাজ করেই যেতে হবে।
শামসুল আলম
সব কাজেরই একটা মূল্যায়ন হওয়া উচিত।
এখনো দেশের অধিকাংশ নারী গৃহে কাজ করছেন। কিন্তু দীর্ঘকাল এ অবস্থা থাকবে না। সময়ের সঙ্গে নারীদের মজুরিবিহীন কাজের অবসান ঘটবে। আমাদের এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণ।
মানুষের বাসায় যদি ওয়াশিং মেশিন, রাইস কুকার, ময়লা পরিষ্কার করার যন্ত্র থাকে, তাহলে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজগুলো করবেন। তখন এসব কাজ নারী করলেন না পুরুষ করলেন সেটা বোঝা যাবে না। এসব প্রযুক্তি মজুরিবিহীন কাজকে অনেক সহজ করে দেবে।
অনেকেই নারীদের সম্পদের অধিকারের বিষয়টি বলেছেন। এই বিষয়টির সঙ্গে আমিও একমত। সম্পদের প্রকৃত অধিকার নারীকে দিতে হবে। তা না হলে নারীর কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান সব সময় বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। আমাদের আরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে হবে। আরও অনেক বেশি কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। তাহলে নারী-পুরুষ সবাই কাজের সুযোগ পাবেন।
আমরা মানি বা না মানি একধরনের পঁুজিবাদী অর্থনীতিতে আমরা আছি। পঁুজিবাদে ব্যক্তি থাকে, রাষ্ট্র থাকে, সমাজ বলে তেমন কিছু থাকে না। সমাজ না থাকলে মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। সেই সমাজে সহযোগিতার মানসিকতা থাকে না।
জীবনের সবকিছু জিডিপিতে আসে না। আর সবকিছু আসতেই বা হবে কেন? উন্নত বিশ্বেও মায়েরা সন্তানের দেখাশোনা করেন। কমবেশি গৃহস্থালির কাজ করেন। তাঁদের এ কাজ কিন্তু জিডিপিতে যায় না।
সবকিছু জিডিপিতে ঢোকার সুযোগ নেই। জিডিপিতে যেতে হলে কোনো একটি বিষয় কোনো না কোনোভাবে লেনদেনের মধ্যে আসতে হবে। জিডিপি হলো এক বছর থেকে আরেক বছরে সম্পদের কতটুকু উন্নয়ন হলো। জিডিপি নির্ণয়ে পরিমাণ ও মূল্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
আমাদের সমাজটা যদি হয় জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিবান্ধব ও অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। নারীর সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টিতে সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। এমন একটি সময় আসবে যখন নারী-পুরুষ সবাই সমানতালে শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করবেন।
এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
পঞ্চাশের দশকে এক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, আমার একটি প্রয়োজনীয় কাগজ আমার স্ত্রী যদি টাইপ করে দেয় তাহলে সেটা জিডিপির অন্তর্ভুক্ত হবে না, কিন্তু সেই কাগজটি যদি অর্থের বিনিময়ে বাইরে থেকে টাইপ করি তাহলে সেটা জিডিপির অন্তর্ভুক্ত হবে।
গৃহস্থালির কাজের মূল্য যদি জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে জিডিপির পরিমাণ বাড়বে কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি বাড়বে না। তবে নারীর যে অবদান তাকে স্বীকৃতি দিতেই হবে।
আরেকটা বিষয় উন্নত দেশেও দেখা যায়, তা হলো নারী-পুরুষ একই কাজ করছেন কিন্তু পুরুষের তুলনায় নারীর বেতন কম। তাহলে কী হলো, নারীরা একই কাজ করেও অবমূল্যায়িত হচ্ছেন। আমাদের দেশে যেহেতু এখনো বেশি মাত্রায় নারীরা শ্রমবাজারে নেই, সে জন্য হয়তো বিষয়টি সামনে আসছে না। তবে এ বিষয়ে আপনারা গবেষণা করতে পারেন।
এখন শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। এখন বিনিয়োগের বিষয়টি একটা বড় ইস্যু। সরকার, পরিকল্পনা কমিশন সবাই এটি নিয়ে চিন্তা করছে। শ্রমবাজারে আসতে হলে নারীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
প্রাইমারিতে ছেলেদের থেকে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি। মাধ্যমিকে প্রায় সমান। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম। এদিকটাও ভাবতে হবে। কীভাবে উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। অনেকগুলো জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। যেমন আমাদের দেশে মেয়েদের বয়স কিছুটা বেশি হলে পরিবার তাদের বোঝা মনে করে।
একটি তালাকের জন্য হয়তো নারী কোনোভাবেই দায়ী নন। স্বামীদের কারণেই হয়তো তালাক হলো, তারপরও আমদের দেশে তালাক হওয়া নারীদের সম্মানের সঙ্গে দেখা হয় না। এসব ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে হবে। নীতি পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু নীতি প্রয়োগ হবে কি না, সে নিশ্চয়তা আমরা কেউ দিতে পারি না।
তবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নারী উন্নয়নের বাধাগুলো দূর করতে পারলে শ্রমবাজারে তাঁদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে। তঁাদের কাজেরও স্বীকৃতি হবে।
আব্দুল কাইয়ুম
গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন জরুরি। নারী ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন। তাঁর এই কাজের কোনো স্বীকৃতি থাকবে না, এটা হতে পারে না। পুরুষদের গৃহের কাজে অংশগ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ গৃহকাজে প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণের কথা বলেছেন। এটা খুব জরুরি। প্রযুক্তি থাকলে পুরুষের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে নারীর মজুরিহীন শ্রমের সময় কমে যাবে। নীতিনির্ধারকেরা গৃহে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধনবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
আলোচনায় সুপারিশ
* শুধু অর্থনৈতিক মূল্য না থাকার কারেণ নারীর সারা দিনের কাজ গুরুত্ব ও মূল্যহীন—এ দৃষ্টিভঙ্গির অবশ্যই পরিবর্তন প্রয়োজন
* নারীকে এখনো ঘরে–বাইরে সমানভাবে কাজ করতে হচ্ছে। নারীর কাজের এ বোঝা কমানো অত্যন্ত জরুরি
* জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হলে পুরুষেরাই কেবল আয়–উপার্জন করেন, এ ভ্রান্ত ধারণা দূর হতো
* প্রচলিত জেন্ডার ধারণায় নারীরা হলো দুর্বল, কোমল হৃদয়, আবেগপ্রবণ, শান্ত, নম্র আর পুরুষেরা সবল, কঠোর, যুক্তিবাদী, দৃঢ়চেতা, কঠিন ইত্যাদি। এসব দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি
* সব ক্ষেত্রে নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমান অধিকার দিতে হবে
যাঁরা অংশ নিলেন
শামসুল আলম : সদস্য, পরিকল্পনা কমিশন
এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
হামিদা হোসেন : চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
শাহিন আনাম : নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
সায়মা হক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা িবশ্ববিদ্যালয়
ফওজিয়া মোসলেম : সহসভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
ফারাহ্ কবির : কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশনএইড, বাংলাদেশ
প্রতিমা পাল মজুমদার : প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ গবেষক, বিআইডিএস
আফজাল হোসেন : ম্যানেজিং পার্টনার, মাত্রা
বনশ্রী মিত্র নিয়োগী : জে্যষ্ঠ সমন্বয়কারী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
তৌফিকুল ইসলাম খান : রিসার্চ ফেলো, সিপিডি
সিমিন মাহমুদ : বিভাগীয় প্রধান, জেন্ডার ক্লাস্টার, বিআইজিডি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো