Published in প্রথম আলো on Monday, 7 March 2016
নারী বান্ধব পরিবেশের অভাব
তিন বছরে শ্রমবাজারে নারী শ্রমিক কমেছে ২.৫ শতাংশ
রাবেয়া বেবী
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস বা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সার্ভে দেখা যায়, তিন বছরে দেশের শ্রমবাজারে নারী শ্রমিকের প্রবেশগম্যতা কমেছে ২.৫ শতাংশ। এই সার্ভেতে দেখা গেছে, ২০১১ সালে শ্রম বাজারে নারী শ্রমিক ছিল ৩৬ শতাংশ ,যা ২০১৩ সালে এসে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিজ্ঞজনেরা বলছেন, ২০০০ সাল থেকে দশ বছরে যে হারে নারী শ্রমিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করেছে, তা ধরে রাখার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় শ্রমিক সংখ্যা হ্রাস পায়। এমন বাস্তবতার মধ্যে “অধিকার মর্যাদায়, নারী-পুরুষ সমানে সমান’ প্রতিপাদ্য করে দেশ জুরে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস।
সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনেরা বলছেন, চাহিদা মোতাবেক দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি, নারী শ্রমিক ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি (ডে-কেয়ার সেন্টার), জ্বালানি ও পানিয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করণ, যাতায়াত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা শ্রম বাজারে বাড়বে নারী শ্রমিকের সংখ্যা।
কেন শ্রম বাজারে শ্রমবাজারে নারী শ্রমিক হ্রাস এমন প্রশ্নের উত্তরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রিসার্চ ফ্যালো তৌফিকুল ইসলাম নারী শ্রমিক কমে আসা উদ্বেগ জনক উল্লেখ করে ইত্তেফাককে বলেন, এখন এই উদ্বেগ কতদিন স্থায়ী হবে সেটাই বিষয়।
তিনি বলেন, প্রথমত দশ বছর পূর্বে দরিদ্রের জন্য শ্রমবাজারে নারীর প্রবেশ বেশি ছিল। অর্থনৈতিক চাহিদা কমে আসার কারণে অনেক পরিবারের নারীরা আর শ্রম বাজারে আসছেনা। দ্বিতীয়ত যে হারে নারীরা বেরিয়ে এসেছিল সেই হারে তাদের আমরা সাপোর্ট দিতে পারিনি। সন্তান লালন-পালন করার কারণে বেশি নারী শ্রমিক হারায় শ্রম বাজার। তাই শিশু দিবা যত্নকেন্দ্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা জ্বালানী ও খাবর পানি সংগ্রহ করতে যে সময় ব্যয় করে, তা শ্রম বাজারে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে।
২০১৪ সালে সিপিডির করা নারীর অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের ওপর এক গবেষণায় দেখা যায় অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের মূল্যমান জিডিপির ৭৭ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, নারীর শ্রমিকরা ৭০শতাংশ পার্টটাইম কাজ করে (গড়ে ৮ ঘন্টার কম)।
সিডও কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালমা খান হসালমা খান ইত্তেফাককে বলেন, নারী শিক্ষার অগ্রগতি শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমাতে পারে। অনেক মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করছে। ফলে তরা সেই সময় শ্রমবাজারে আসছে না। শ্রমবাজারও আগের মত নাই। প্রযুক্তি এথন অনেক শ্রমিকের জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমাদের সেই বিষয়টিও দেখতে হবে। ট্রেনের লাইন ম্যান লাগছেনা,দোকানের হিসাব এখন ক্যালকুলেটরে হয়। ফলে হিসাবের খাতা তৈরির শ্রমিক কমেগেছে। কম্পিউটার অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরে কাজ করছে। ছেলেরা হাট-বাজারে নানাভাবে প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হচ্ছে, যে সুযোগ মেয়েদের ক্ষেত্রে কম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ি শ্রমিক সৃষ্টি করতে না পারলে শ্রমবাজারে নারীর সংখ্যা আরও কমবে বলে তিনি মনে করেন। বিবিএস তিন বছর আগে এক গবেষনায় বলে, প্রতিবচর ২২ লাখ শ্রমিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। উন্নয়নশীল দেশে চাহিদা অনুযায়ি শ্রমিক সৃষ্টি হয় না। নারী শ্রমিকের অংশ গ্রহণ বাড়াতে সরকার, সমাজ ও পরিবাকে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তৌফিকুল ইসলাম।
র্কসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সাপোর্ট দেয়ার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকার নিলেও পরিবারে কাজের দায়িত্ব পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এসকল বিষয় সরকার কতটাই সচেতন এমন প্রশ্নের জবাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি ইত্তেফাককে বলেন, সরকার প্রত্যেক জেলায় কর্মজীবী নারীর হোস্টেল করছে। উচ্চবৃত্ত, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের জন্য তিন ধরণের হোস্টেল হবে। নিম্নবিত্তরা বিনা খরচে এই সুবিধা পাবে।
একইভাবে সরকার জেলাভিত্তিক ডে-কেয়ার সেন্টারও করছে। যাতায়াতের জন্য বাস আছে যা চাহিদার তুলনায় কম। তাই সরকার কর্মজীবী নারীদের জন্য আরও বাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয় স্ব-রাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারপরেও কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটলে আমারা স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাগিদ দেই। আপনারা জানেন নারী উন্নয়নে ৪০টি মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। নারীর সকল বিষয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য নয়। তাই সুশিল সমাজসহ সবার সম্মিলি প্রচেষ্টাই পারবে নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে।