Originally posted in প্রথম আলো on 19 August 2022
আমাদের দেশে পচনশীল ও অপচনশীল খাদ্যপণ্যের বাজার ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর সরকারের তেমন কোনো নজরদারি বা তদারকি নেই। এ ধরনের বাজারকাঠামোতে তাই যখনই কোনো প্রভাব যুক্ত হয়, তখনই এ কাঠামোর শক্তিশালী পক্ষগুলো সেই সুযোগ নেয়।
নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে তারা বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়। যেমনটি আমরা বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। এ কারণে বাজারে পণ্যের দামের ক্ষেত্রে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতার ভুক্তভোগী হচ্ছেন ভোক্তারা। যাঁদের পক্ষে কথা বলার শক্তিশালী কোনো পক্ষ বাজারকাঠামো বা সরবরাহব্যবস্থায় নেই। সহজ করে বললে ভোক্তার পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। তাই নিয়তি হিসেবে তাঁদের বাড়তি দামের চাপ মেনে নিতে হচ্ছে।
আমরা যদি আমাদের বাজারকাঠামো দেখি তাহলে দেখতে পাই, বাজারে পণ্যমূল্যের দাম নির্ধারিত হয় কখনো উৎপাদক, আবার কখনো মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবের ওপর। এ কারণে অনেক সময় চাহিদা ও জোগানের মধ্যে খুব বেশি ফারাক না থাকলেও অযৌক্তিকভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। ফলে বাজারকাঠামোর ওপর যার প্রভাব যত বেশি, তিনি তত বেশি দাম বাড়াচ্ছেন।
জ্বালানি তেল এমন একটি উপাদান, যেটির দাম বাড়লে শুধু পরিবহন খরচ নয়, সব ধরনের খরচ বেড়ে যায়। তখন তা ভোক্তাশ্রেণিকে ছাড়িয়ে সব ব্যক্তির ওপর গিয়ে প্রভাব ফেলে। তাতে অনেক ধরনের বাড়তি খরচের চাপ গিয়ে পড়ে পণ্যমূল্যের ওপর।
গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিন দফায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রথম দফায় হয়েছে করোনাকালে। তখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক দফা পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আরেক দফা দাম বেড়েছে। এখন দাম বাড়ানো হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে। এ কথা সত্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে।
জ্বালানি তেল এমন একটি উপাদান, যেটির দাম বাড়লে শুধু পরিবহন খরচ নয়, সব ধরনের খরচ বেড়ে যায়। তখন তা ভোক্তাশ্রেণিকে ছাড়িয়ে সব ব্যক্তির ওপর গিয়ে প্রভাব ফেলে। তাতে অনেক ধরনের বাড়তি খরচের চাপ গিয়ে পড়ে পণ্যমূল্যের ওপর। তবে এখন বাজারে আমরা পাইকারি ও খুচরা দামের যে তফাত দেখছি, সেটিকে কোনো সূত্র ও যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারণ, যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়ছে। ভোক্তার পক্ষে সরব হওয়ার মতো শক্তিশালী কোনো পক্ষও এই মুহূর্তে নেই।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের অনেক করণীয় রয়েছে। যদি তারা সত্যিকার অর্থেই ভোক্তাকে সুরক্ষা দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকার যেটি করতে পারে, তা হলো যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি নিয়মিতভাবে ভোক্তাকে জানানোর ব্যবস্থা করা।
জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে পণ্য পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে যৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম কতটা বাড়তে পারে, তার একটি পরিসংখ্যান ভোক্তার সামনে তুলে ধরা দরকার। তাতে ভোক্তা যেমন সচেতন হবেন, তেমনি সরবরাহব্যবস্থায় যাঁরা দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন, তাঁরা সতর্ক হবেন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি