Published in বিবিসি বাংলা on Friday 17 May 2019
বাংলাদেশের ঋণ খেলাপি: ‘ঋণ নিতে যায় যেন ফেরত না দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই’
বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেবার চিন্তাভাবনা চলছে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের জন্য এমন কিছু সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে যেটি অতীতে এতো ব্যাপকভাবে কখনো দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে বিশেষ নীতিমালা জারি করেছে সেখানে বলা হয়েছে, বকেয়া ঋণের ২% টাকা জমা দিলে ঋণ পুন:তফসিল করা যাবে।
এরপর এক বছর ঋণ পরিশোধ না করে বাকি টাকা ১০ বছরের মধ্যে দিলেই হবে।
সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, আগে নিয়ম ছিল ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত বকেয়া ঋণের টাকা দিয়ে সেটি পুন:তফসিল করা যেত।
ঋণের অংশ বড় হলে সেক্ষেত্রে ৫% টাকা দিয়ে সেটি পুন:তফসিল করা যেত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন বিধিমালায় ২% টাকা দিলে এক বছর ঋণ পরিশোধ না করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে সেটি আগে ছিল না।
মি. আমিন বলেন, ২০১৫ সালের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ছিল সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত বছর।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ এবং আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সে জন্য ঋণ প্রবাহ বজায় রাখা এবং ঋণ আদায়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের যুক্তি হচ্ছে, ঋণ খেলাপিদের ছাড় দিয়ে হলেও যদি টাকা আদায় করা যায় তাহলে ব্যাংকিং খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। অর্থাৎ তারল্য সংকট কাটবে।
সরকারের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, যেসব ব্যবসা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তাদের প্রতিষ্ঠানে হয়তো কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
ঋণের টাকা ফেরত দেবার ক্ষেত্রে তাদের কিছু সুবিধা দিলে হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চলতে পারবে।
নতুন উদ্যোগের ফলে কি ঋণ আদায় বাড়বে?
সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, ২০১৫ সালে ১৫টি ঋণ খেলাপি বড় কোম্পানিকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল।
“খুব সুখকর রেজাল্ট আমরা লক্ষ্য করিনি। মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল। বাকিরা টাকা না দিয়ে আবার খেলাপি হয়েছেন,” বলছিলেন মি. আমিন।
প্রায় এক বছর আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১,৩১,০০০ কোটি টাকা। এই ঋণের ৪৩% সরকারি ব্যাংকগুলোতে।
গত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে খেলাপি ঋণ চারগুণ বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু সেটি ফেরত দিচ্ছে না, তাদের শাস্তির বদলে উল্টো সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, যারা ঋণ খেলাপি হচ্ছে তাদের অনেকেই মনে করছে যে সময় মতো ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও চলবে।
সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে তারা ঋণ খেলাপি হচ্ছেন কিনা সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
“ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির পরিমাণটাই এখন বেশি হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন ঋণ নিতে যায় যেন এটা ফেরত দিতে না হয় সেরকম ইচ্ছা পোষণ করে,” বলেন ফাহমিদা খাতুন।
ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, বড় ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দেবার জন্যই এই নতুন চালু করেছে সরকার।