Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Monday 3 December 2018
ধনী-গরিব বৈষম্য কমানোর ঘোষণা ভোটে আসতে হবে
মানিক মুনতাসির
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে অর্থনীতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে এ ঘোষণায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অঙ্গীকার থাকতে হবে। এর পাশাপাশি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে ধনী-গরিবের বৈষম্য এবং উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ কমানোর বিষয়টি। কেননা গত কয়েক বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার দ্রুতগতিতে কমলেও ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েছে এবং বাড়ছে সমান তালে। এতে সমাজে এক ধরনের অসমতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। গতকাল এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন, পুঁজি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও নীতি সহায়তার ঘোষণা আসতে হবে ইশতেহারে। সেই সঙ্গে নতুন করে ব্যবসা শুরুর যে খরচ (ডুয়িং বিজনেস), এটা কমাতে হবে। উৎপাদন খরচও কমাতে হবে। ব্যাংকের সুদহার যেন সহনীয় থাকে। ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির সহজতা এবং ব্যাংক খাতের দুর্নীতি কমিয়ে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা থাকতে হবে। অন্যদিকে সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে হবে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর। হয়রানি কমাতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানে। সেবা প্রাপ্তি আরও সহজীকরণের অঙ্গীকার করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে, যার মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে। শ্রমবাজারের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তরুণরা যেন আত্মকর্মসংস্থানের দিকে ধাবিত হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য তরুণ উদ্যোক্তাদের পুঁজি প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। পাশাপাশি জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে বহির্বিশ্বে পাঠাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা, রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা। আর সেটি নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্কারভাবে অঙ্গীকার করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে এরও নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ফলে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা রাখতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে আত্মকর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তার মতে, উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সুফল সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হলে বৈষম্য কমাতে হবে, যার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসতে হবে নির্বাচনী ইশতেহারে। আর নির্বাচনে যে দলই জয়ী হোক দেশ চালাতে হবে সেই ইশতেহার অনুযায়ী।