Originally posted in Prothom Alo on 21 January 2024
বড় প্রকল্প ২ বছর বাদ থাকুক, চিহ্নিত হোক লুণ্ঠিত ঋণ
সামষ্টিক অর্থনীতি অস্থিতিশীলতার মধ্যে আছে। এমন সময়ে দেশে নতুন কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া অন্তত দুই বছরের জন্য বাদ দিতে হবে। আর চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের মধ্যে লুণ্ঠিত ঋণ বা বেনামি ঋণ। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কার করতে দরকার টাস্কফোর্স গঠন করা।
প্রথম আলো আয়োজিত ‘অর্থনীতি: নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল শনিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় এতে সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানো। আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামানো একটা ‘অতি আশা’। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রথমেই নতুন সরকারের সদিচ্ছা লাগবে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের পরামর্শ হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার আরও বেশ হারে বাড়াতে হবে, পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থে দরকার বাজার তদারকি, ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া এবং ব্যবসাবান্ধব বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করা।
আগামী দুই বছর কোনো মেগা প্রকল্প না নেওয়ার সুপারিশ করেছেন সদ্য সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। এর বাইরে বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমাতে ছয়টি সুপারিশ করেছেন তিনি। এগুলো হচ্ছে করছাড় যৌক্তিক করা, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে মধ্যে রাখা, গড় শুল্ক-কর হার ২০ শতাংশে নামানো, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করা এবং জোরালোভাবে বাজার সংকেত অনুসরণ করা।
তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কিছু ‘মেগা প্রজেক্ট’ আর্থিকভাবে ও পরিবেশগতভাবে ‘মেগা ডিজাস্টার’ (বড় দুর্যোগ)-এ পরিণত হবে। এর জের অনেক দিন ধরে টানতে হবে জনগণকে।
মূল্যস্ফীতি কমাতে শুধু সুদহার বৃদ্ধি নয়
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বেশি দামে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও এসেছে। এরপর স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পরের কারণ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। উৎপাদন খরচ একবার বেড়ে গেলে রাতারাতি তা কমানো যায় না। যে হারে উৎপাদন খরচ বাড়ে, সে হারে খরচ কমে না। ফলে শুধু সুদহার দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
শামসুল আলমের মতে, মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্য অর্থনীতি এখন প্রস্তুত বলে মনে হয় না। কারণ, দেশের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় কাছাকাছি পর্যায়ের নয়।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এখন যে ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে, এর অর্ধেক ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে। তাঁর মতে, ট্যারিফ হার কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর সময় এসেছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে সুদহার আরও বাড়ানোর মাধ্যমে। সুদহার বাড়ালে ডলারের বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা ফিরবে, ব্যাংকের তারল্যসংকটেরও সমাধান হবে। তখন বাইরে থাকা টাকাও ব্যাংকে ফিরে আসবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার মুদ্রানীতিকে অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহারই করা হয়নি।
লুণ্ঠিত ঋণ চিহ্নিত করতে হবে
ঋণ খেলাপি, বেনামি ঋণ—এসব নিয়ে কথা বলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বড় দৃষ্টান্ত এখন বাংলাদেশ। খেলাপি ঋণের একটা অংশ ইচ্ছাকৃত। আবার বেনামি ঋণও আছে। বেনামি ঋণের আলাদা কোনো হিসাব হয় না। বেনামি ঋণের পরিমাণ কত, তা চিহ্নিত করতে হবে।
ফারুক মঈনুদ্দীন বলেন, খেলাপি ঋণ ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। সময়মতো এর চিকিৎসা না নিলে তা আরও দুরারোগ্য আকার ধারণ করবে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারাই ব্যাংকারদের বাধ্য করেছেন খারাপ ঋণ দিতে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মো. আলী খোকন বলেন, বেনামে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে বা যেটা লুণ্ঠিত ঋণ, তাকে মন্দ ঋণ বলা ঠিক নয়। লুণ্ঠিত ঋণকে আলাদা করে দেখতে হবে। খেলাপি ঋণকে বেনামি ঋণ ও মন্দ ঋণে ভাগ করতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা হল–মার্ক, পি কে হালদার, বেসিক ব্যাংক কিংবা বিসমিল্লাহর কেলেঙ্কারির দায়ভার কেন নেবেন? ব্যাংকের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; বাংলাদেশ ব্যাংক কি তখন ঘুমিয়ে ছিল?
ব্যাংক খাত দুর্বল হয়ে গেছে—এমন মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বলেন, ফেরত না দেওয়ার জন্য কেউ কেউ ইচ্ছে করে ঋণ নিয়েছে। কারণ, ফেরত না দিলে কিছু হয় না।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, কয়েকটি ব্যাংক একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে। এগুলোর জন্য ব্যাংক খাতে মার্জার (একীভূত) ও একুইজিশন (অধিগ্রহণ) অনুমতি দেওয়ার সময় এসেছে।
‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ জাহাজীকরণ খরচ
বর্তমানে জাহাজীকরণের খরচ বৃদ্ধিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, বিদেশি জাহাজগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে ৪০-৫০ শতাংশ। একে ‘অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। নাসিম মঞ্জুরের প্রশ্ন, কত লাভ করতে চান তাঁরা?
ডলারের মূল্যবৃদ্ধিও ব্যবসায়ের খরচ বৃদ্ধির আরেক কারণ বলে মনে করেন নাসিম মঞ্জুর। বলেন, পণ্যের দাম ও মানের পাশাপাশি কত তাড়াতাড়ি মালামাল ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যায়, তা এখন ধীরে ধীরে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন যেখানে ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য তৈরি করে ক্রেতাকে সরবরাহ করতে পারে, আমাদের সেখানে ১০৯ দিন লাগে। এতে আমরা চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না।’
নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, ‘ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি বড় উপকরণ জ্বালানির দাম। সারা বিশ্বে তেলের দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়ে। কিন্তু সারা বিশ্বে যখন কমে, তখন আর আমাদের কমে না। কেন কমে না? সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের মুনাফা দেখানোর জন্য উৎপাদকদের খরচ কমানো সম্ভব হয় না।’
জ্বালানিসংকট ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় সমস্যা বলে মনে করেন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। তিনি বলেন, জ্বালানিসংকটে কলকারখানার বয়লার বন্ধ রাখতে হয়। এতে সব কেমিক্যাল নষ্ট হয়ে যায়। শুধু আমদানি করা জ্বালানি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য টেকসই করা যাবে না।
ছাপানো টাকা পাচ্ছে ইসলামি ব্যাংক
টাস্কফোর্স গঠন করে ব্যাংক খাত ও কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে, টাকা ছাপিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত ও অধিগ্রহণ করা শুরু করতে হবে। ১০-১৫টি ব্যাংক দুর্বল অবস্থায় পৌঁছেছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করলেও ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এক হাতে টাকা ছাপানো বন্ধ করে আরেক হাতে টাকা ছাপানো হচ্ছে। এভাবে পুরো ব্যাংক খাতে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এখন বরং বলা উচিত দুর্বল ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। বলা হচ্ছে গভর্নরকে দেওয়া ক্ষমতায় টাকা দেওয়া হচ্ছে। জনগণের টাকা এভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। এভাবে টাকা দেওয়ার জবাবদিহি থাকতে হবে। কেন দু-তিন বছরে ব্যাংকগুলো এত খারাপ হয়ে পড়ল, এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
আহসান মনসুরের মতে, দেশের অর্থনীতিতে আরেকটি সমস্যা হলো আর্থিক হিসাবে ঘাটতি। বড় করপোরেটরা আগে কম সুদে বিদেশি ঋণ নিয়েছিল, ডলারের দাম বাড়তে থাকায় এখন তা শোধ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে ঋণ নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গ: পুঁজি পাচার
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এ দেশে পুঁজি ও মানুষের নিরাপত্তা কম। এ কারণে দেশ থেকে পুঁজি ও মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষ ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে পারলে পুঁজি ও মেধা পাচার বন্ধ হবে। ব্যাংকারদের অনেকে অবসরের দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে কানাডায় বেগম পাড়ায় চলে যান, তাঁদের ব্যক্তিগত ও সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে।
গবেষক মাশরুর রিয়াজ বলেন, দেশ থেকে পুঁজি পাচার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এর বড় অংশই হচ্ছে বাণিজ্যিক লেনদেনের আড়ালে।
বিনিয়োগ কেন আসবে
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বিনিয়োগ হারিয়ে যাচ্ছে, কথাটি সত্যি। ব্যাংকে টাকা রেখে এখন সাড়ে ১০ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়, তাহলে এত কষ্ট করে ব্যবসা করার দরকার কী? বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সরকারের উচিত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আস্থায় নেওয়া। তিন মাস অন্তর অন্তর হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসা উচিত। আগের অর্থমন্ত্রীর (আ হ ম মুস্তফা কামাল) সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হতো না। আমরা চাই নতুন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক মাসে না হলেও অন্তত তিন মাসেও যেন একবার বৈঠক করা যায়। সমাধান চাই না, অন্তত আমাদের কথাগুলো শুনুন—এটা চাই।’
ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি ফারুক মঈনুদ্দীন বলেন, অর্থনীতির সিদ্ধান্তগুলো বাজারভিত্তিক না করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৬-৯ সুদহার চাপিয়ে দেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি। সুবিধাবাদী গ্রুপ ২০১৯ সাল থেকে ৯ শতাংশ সুদহার চালুর জন্য চাপাচাপি করছিল, ব্যাংকগুলো এটা মানতে চায়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এটা কার্যকর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এরপর বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি।
ফারুক মঈনুদ্দীন বলেন, দেশের এখন ৫-১০ লাখ টাকার বেশি সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত। এতে কর ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। বিনিয়োগ আনার জন্য সেভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আর স্বাধীনতার ৫২ বছরেও দেশে বিনিয়োগ নীতি হয়নি।
এনবিআরকে শুধু কর সংগ্রহ করলে হবে না, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশও তৈরি করতে হবে—এমন মন্তব্য করে মাশরুর রিয়াজ বলেন, ন্যূনতম কর, করছাড় ও দ্বৈত করের মতো বিষয়ে নানা অসংগতি আছে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে এগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মনে করেন, পুঁজি দেশে আসার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। বিদেশ থেকে আসার সময় কারও কাছে ১০ হাজার ডলারের বেশি থাকলে বিমানবন্দরে ঘোষণা দিতে হবে কেন—তাঁর প্রশ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কোনো সংকটের সমাধান দেবে না। বিনিয়োগ কেন স্থবির হয়ে গেছে, সঞ্চয়ের হার কম কেন এবং আয়কর কেন বাড়ছে না, এসব নিয়ে আলোচনাই হয় না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৩-২৫ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে অনেক দিন ধরে। এটা বাড়ছে না। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান ও আয় বাড়বে না।
প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক আনু মুহাম্মদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, পুরো আর্থিক খাতজুড়ে তার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, তার কিছুই কাজ করছে না। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানও সামগ্রিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের মতের কোনো প্রতিফলন নেই। মানুষ যে মত দিচ্ছে আর সিদ্ধান্ত যা নেওয়া হচ্ছে, একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল নেই।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘২০১৪-১৫ সাল থেকে যদি আমরা ৫০ পয়সা, ১ টাকা করে টাকার অবমূল্যায়ন করতাম, তাহলে একসঙ্গে ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়নের ধাক্কা খেতে হতো না। আর ট্যারিফ ব্যবস্থার যৌক্তিকতা দরকার এখন। বাংলাদেশের গড় ট্যারিফ হার এখনো ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এ হার গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে গড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর বৈশ্বিক গড় ৬ শতাংশ।’
বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২০ কোটি ডলারের এলএনজি আমদানি করে সরকার। নিজস্ব গ্যাস থাকলে এ ডলার খরচ করে এলএনজি আনা লাগত না। আমদানিনির্ভর জ্বালানি দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প টেকসই হবে না। অথচ গ্যাস–সংকটের কারণে আমাদের কারখানার উৎপাদন ৩০-৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, দুঃখজনক হচ্ছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে কখনো কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মাটির নিচের ভূতত্ত্ব নিয়ে যাঁদের কোনো জ্ঞান নেই, তাঁদের দিয়ে ভূতত্ত্ব দপ্তর চালানো হচ্ছে। তাহলে জাতি কী আশা করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নিজ ক্ষমতাবলে দেখিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন সাইনে রিজার্ভের হিসাব যা-ই দিক না কেন, রিজার্ভ প্রকৃত অর্থে কত, তা এখন জানা সম্ভব। তিনি বলেন, বানানো গল্পের ওপর আলোচনা করা হলে সেই গল্পের ভিত্তি থাকে না। জিডিপি নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই, সেখানে সব তথ্য থাকে না।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাজার একধরনের প্রতিষ্ঠান, সেটা কাজ না করলে কীভাবে হবে। দেশের ধনিক শ্রেণি ও নীতিপ্রণেতারা একাকার হয়ে গেছেন।