Published in বণিক বার্তা on Sunday, 4 June 2017
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা
ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি অযৌক্তিক
ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি অযৌক্তিক। ১ লাখ টাকা জমা রাখলেই কেউ ধনী হয়ে যায় না। আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গতকাল রাজধানীতে ‘ন্যাশনাল বাজেট ২০১৭-১৮: পেভিং দ্য ওয়ে টু ভিশন ২০২১/৪১’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন আহমেদ।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সেন্টার ফর অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিইএসডি) আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মিডিয়া পার্টনার ছিল বণিক বার্তা। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, দ্য ফেডরেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ড. আশিকুর রহমান, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএ) সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ প্রমুখ।
ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, দেশে এখনো নগদে লেনদেন হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সামনে রেখে এ বাজেট করা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের অভাবে একটি সংকটের সূত্রপাত হতে পারে। এক্ষেত্রে আর্থিক খাতের সংকটের বিষয়টি যেন আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে না দিই। আর্থিক খাতের সংকটের কারণে অনেক বড় সরকারের পতনও হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঋণখেলাপি প্রসঙ্গে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তহবিলে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। গত সাত বছরে এ খাতে মোট ১৩ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। ঋণখেলাপিদের কারণে কুঋণ হিসাবে বরাদ্দের বোঝা সাধারণ মানুষকে টানতে হচ্ছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব ক্যান্সারের মতো দেখা দিয়েছে। এর কারণে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্কের প্রভাবে তিনি বলেন, এতে পুঁজি কমে যাবে ও প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে নিরুত্সাহিত হবেন। ড. মোস্তাফিজুর রহমান ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক থেকে কত টাকা নেবেন আর কত বদনাম নেবেন, তা বিবেচনা করা দরকার। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে। এ আস্থাহীনতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক পণ্যের দর পড়ে যাচ্ছে। দেশেও ব্যবসার খরচ বাড়ছে। পোশাক খাতে সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, ঠিক একই রকমের যৌক্তিক প্রণোদনা আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করবে।
বাজেটের সামগ্রিক বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের বাজেট দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলায় ছোট। আমাদের বাজেট মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) মাত্র ১৮ শতাংশ। যেখানে ভারত, নেপাল, আফগানিস্তানের বাজেট যথাক্রমে জিডিপির ২৮, ২৭ ও ২২ শতাংশ। এ বাজেট লোক দেখানোর জন্য করা হয়নি। বরং কর্মসংস্থান ও দেশের উন্নয়নের জন্যই করা হয়েছে।
ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্কের বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, এ ধরনের শুল্ক আগেও ছিল। এবার এর হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে সীমা নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
আলোচনায় শিক্ষা খাতে বিমাতাস্বরূপ আচরণ পরিহারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি ও রফতানি বাজার সম্প্রসারণের তাগিদ দেয়া হয়।