বাংলাদেশ সরকার যদি মনে করে যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) ভূমিকা প্রয়োজন, তাহলে সরকারকে এনজিও’দের কার্যক্রমের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈদেশিক অনুদান নিয়ে এনজিও চালিয়ে দেশের উন্নয়ন করবো – এই মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। গত ১০ মার্চ ২০১৮-এ এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত “এসডিজি বাস্তবায়নে এনজিওদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন” শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
ড. ভট্টাচার্য আরো বলেন, আমরা এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করবো আবার বিদেশের টাকা দিয়ে এনজিও চালাবো – এই দুটো একসাথে চলতে পারে না। চরম দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধি, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় – সরকারের পাশাপাশি এনজিও’দের ভূমিকা রাখতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে এসডিজি অর্জন করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রয়াস প্রয়োজন।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’র মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব কে এম আব্দুস সালাম ব্যুরো’র সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় সঞ্চালনা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি, সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব মনোয়ার আহমেদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও উদযাপন বিষয়ক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান, গবেষণা ফেলো, সিপিডি, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের করণীয় বিষয়ে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে গত ১৮ই মে ২০১৭ অনুষ্ঠিত “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা” শীর্ষক সম্মেলনে গৃহীত বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে মূলতঃ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব মোঃ নজিবুর রহমান বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণকে এক ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারের সাথে সাথে দেশের বেসরকারি খাতও এই সাফল্যের ভাগীদার। এই সাফল্যের গতিতেই বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে এগিয়ে যাবে এবং, সরকার ও বেসরকারি খাতের মাঝে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করতে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর জোর গুরুত্ব প্রদান করেন- ১) সরকার ও বেসরকারি ঊন্নয়ন সংস্থার মাঝে সহযোগিতার সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সৃষ্টি, ২) সরকার ও বেসরকারি ঊন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মাঝে সহযোগিতার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন, এবং ৩) বেসরকারি ঊন্নয়ন সংস্থার জন্য “এসডিজি ট্রাস্ট ফান্ড” গঠন তথা সরকারি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ “এসডিজি ট্রাস্ট ফান্ড” গঠন করার প্রস্তাবটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গঠনমূলক হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি মনে করেন, অল্প অল্প করে হলেও এখন থেকেই “এসডিজি ট্রাস্ট ফান্ড” গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিৎ। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে তিনি এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান। সরকার ও বেসরকারি খাত সকলেই দেশের উন্নয়নের জন্য অবদান রাখছে এবং এই সম্মিলিত অবদানে দেশের জনগণ উপকৃত হচ্ছে। আগামীতে সরকার ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জনাব আজাদ।
সভায় দেশের বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।