Originally posted in প্রথম আলো on 21 January 2024
নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। বদল এসেছে মন্ত্রিসভায়ও। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতিই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতির বর্তমান সংকট ও করণীয় নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সুফল ভোগ করছিলাম। হঠাৎ সেটা স্তিমিত হয়েছে করোনো ও করোনা-পরবর্তী যুদ্ধে। সেখান থেকে আমরা বের হতে পারছি না। বর্তমানে অর্থনীতিতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সংকট রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি সংকটের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকা-ডলার বিনিময় হারের দোদুল্যমানতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এই তিনটাই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এখানে থেকে অনেক সমস্যার উদ্রেক হচ্ছে।
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, মধ্যমেয়াদি সমস্যাগুলো কাঠামোগত। প্রথমত, ব্যাংক খাতের সমস্যা। ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে গেছে। আগে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো দুর্বল ছিল, এখন বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো দুর্বল হচ্ছে। পাঁচ-ছয়টি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলোর স্বাস্থ্য ভালো নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ঋণ খেলাপি। এটি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমরা দেখছি, ইচ্ছা করে ঋণ নিয়ে অনেকে ফেরত দিচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, কর-জিডিপির হার আমরা বাড়াতে পারছি না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ শতাংশের ওপর নিয়ে যাওয়ার। কর আদায় না বাড়ায় অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কার্যক্রম, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। দেশে এত এত কোটিপতি হচ্ছে। এই কোটিপতিরা ১-২ কোটি টাকার সম্পদের মালিক নয়, ১০০-২০০-৫০০-১০০০ কোটি টাকার মালিক। কিন্তু সেই হারে কর আদায় বাড়ছে না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, তৃতীয়ত, বিনিয়োগ হারিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে বিনিয়োগ জড়িত। এই সংকটের সময় বৈদেশিক বিনিয়োগ এলই না। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩-২৫ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে অনেক দিন ধরে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান ও আয় বাড়বে না। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আমদানি সংকুচিত করা হয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। এই পরিস্থিতি চললে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রভাব ফেলবে।
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার মুদ্রানীতিকে অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। গত বছরের জুলাইয়ে মুদ্রানীতিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবারের মূল্যস্ফীতিতে নীতি সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। তবে আরেকটু আগ্রাসী হওয়ার দরকার ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হবে।