Originally posted in The Business Standard on 23 February 2021
ড. দেবপ্রিয় বলেন, কৃষি-বান্ধব নীতি মানেই যে তা কৃষক-বান্ধব- তা নয়, এই ব্যবধান ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। “তাই সরকার কৃষি-বান্ধব হলেই কৃষকেরা লাভবান হবে- তা বলা যায় না।”
মহামারির অভিঘাত মোকাবিলায় কৃষি খাতে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, কিন্তু এর পরিমাণ অপর্যাপ্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ঋণের আকারে দেওয়া প্রণোদনার চাইতে, সরাসরি দেওয়া অর্থ সহায়তা বেশি কার্যকর, কারণ, তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতাহীন কৃষকেরা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন হন। “একারণেই, মহামারির মধ্যে কৃষকদের মাথাপিছু ২,৫০০ টাকা করে দেওয়া অর্থ সহায়তা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।”
আজ সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) আয়োজিত ছায়া সংসদ অধিবেশন বিতর্কের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বাংলাদেশ নীতি গবেষণা কেন্দ্রের (সিপিডি) স্বনামধন্য ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, কৃষি-বান্ধব নীতি মানেই যে তা কৃষক-বান্ধব তা নয়, এই ব্যবধান ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। “তাই সরকার কৃষি-বান্ধব হলেই কৃষকেরা লাভবান হবে- তা বলা যায় না।”
তিনি সরকারের প্রতি কৃষক-বান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে করে কৃষির উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের মতো সকল স্তরে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়ে দূর হবে কৃষকদের বঞ্চনা।
প্রণোদনা বন্টনে শুধুমাত্র প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে; স্থানীয় সরকার, এনজিও এবং বেসরকারি খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানান এ অর্থনীতিবিদ। মহামারির ভয়াবহ প্রভাব নিরূপণে খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান কিরণ বলেন, গার্মেন্টস ও আমদানি-রপ্তানির অন্যান্য খাতের তুলনায় তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের কাছে কোভিড-১৯ প্রণোদনার অর্থ যথেষ্ট পরিমাণে যাচ্ছে না। কৃষি-বান্ধব সরকার কোভিড সহায়তা অব্যাহত রাখলেও, অনেকক্ষেত্রে ক্ষুদ্র চাষিরা কোনো প্রকার সহায়তা পাননি।
কৃষিখাতে মহামারির অভিঘাত মোকাবিলায় ১০টি সুপারিশ করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে; সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ঋণের সুদ দেওয়া থেকে অব্যাহতি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, অতি-ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল গঠন, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ এবং কৃষির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী কৃষি কমিশন গঠন।
ছায়া সংসদে সরকারি দলের আইনপ্রণেতার ভূমিকা পালন করে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার টিম, বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ- এর বিতার্কিক দল। বিচারক মণ্ডলীতে ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস এবং চার বিশিষ্ট সাংবাদিক- মইনুল আলম, অনিমেষ কর, দৌলত আখতার মালা এবং কাবেরি মৈত্রেয়।