Originally posted in প্রথম আলো on 10 May 2024
আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলো সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বেশ অনেক আগে থেকে আমরা এসব নিয়ে কথা বলছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে অর্থনীতির স্বার্থে সঠিক পথে থাকতে হবে। তবে এটাও বলব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো বিলম্বিত সিদ্ধান্ত। এগুলো অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।
যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার প্রভাব থাকবে। অর্থনীতির ওপর এসবের নেতিবাচক অভিঘাত হবে। তবে আরও আগে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা কম বেদনাদায়ক হতো।
সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে, তার সঙ্গে এ সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিনিময় হারে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। ডলারের দাম একবারে যতটা বেড়েছে, তা ক্রলিং পেগের সঙ্গে হয়তো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে এ সিদ্ধান্ত ঠিক আছে।
সুদের হার বাজারভিত্তিক হওয়ার কারণে অর্থ ধার করার খরচ বাড়বে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। আমরা জানি, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা রকম খরচ আছে। ঘুষ-দুর্নীতির কারণেও ব্যবসার খরচ বাড়ে। তবে দক্ষতা, সুশাসন, জবাবদিহি, দুর্নীতি হ্রাস—এসব নিশ্চিত করতে পারলে বিরূপ প্রভাব অনেক কমাতে পারব।
ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ আরও বাজারভিত্তিক করার ফলে প্রবাসী আয় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল থেকে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আসবে। ফলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে ডলারের দাম বৃদ্ধি রপ্তানিকারকদের জন্য ভালো হবে। তাঁদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা আরও বাড়বে। ডলারের বৃদ্ধি যদিও আমদানিকারকদের জন্য ভালো খবর নয়, তবে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য আগে থেকেই ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ডলার কিনছিলেন। সুতরাং তাঁদের ওপর অভিঘাত কম হবে।
ডলারের দাম বাড়ার অভিঘাত বরং সরকারের ওপর বেশি হবে। কারণ, সরকার সার, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস আমদানিতে আনুষ্ঠানিক দরে ডলার কিনতে পারত। এখন এসব পণ্য আমদানিতে সরকারকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।
ভোক্তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রভাব থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার–সংক্রান্ত সরকারি যেসব সংস্থা রয়েছে, যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। সরকারকে ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা করতে হবে, যাতে অন্যায্যভাবে পণ্যমূল্য না বাড়ে।