Published in প্রথম আলো on Monday 16 March 2020
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বড় অংশীদার হচ্ছে চীন। আমাদের কাঁচামালের বড় একটি অংশ আসে চীন থেকে। এখন সেটা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কমে গেছে। এতে আমাদের রপ্তানিকারকেরা আদেশ অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপাক পড়ছেন। আবার জাহাজ চলাচলেও নানা রকম সতর্কতা আছে, এতেও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি উৎপাদনকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ। ইতালির সরকার ইতিমধ্যে নাগরিকদের ঘর থেকে না বেরোনোর নির্দেশনা দিয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য জায়গায়ও এ রকম নির্দেশনা দেওয়া হলে, সেখানকার মানুষের আয় কমবে। তখন তাঁদের চাহিদাও কমে যাবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি যেমন মার খাবে, তেমনি ইউরোপজুড়ে বাঙালিদের যেসব ছোট ছোট ব্যবসা আছে, সেগুলো বন্ধ হবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসী আয়েও প্রভাব পড়বে।
করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস নামছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। এতেও আমাদের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমবে বলে ধারণা করা যায়।
প্রাদুর্ভাব যদি জুন-জুলাই পর্যন্ত থাকে, তাহলে হয়তো অর্থনীতি নিজের নিয়মে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে পারবে। কিন্তু এর চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি হলে বিপদ বাড়বে।
বিনিয়োগকারীরা আগেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায়না প্লাস ১ কৌশল গ্রহণ করেছেন। এতে সেই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। চীনে ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। তারাও সানসেট শিল্প অন্যত্র স্থানান্তর করতে চাচ্ছে। সেই সুযোগ ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশ নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ এতে কতটা সুবিধা নিতে পারবে, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ও প্রস্তুতির ওপর। তবে করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে গেছে। আর তেলের দাম কমলে পণ্যমূল্যও কমে। সব মিলিয়ে এতে আমাদের কিছুটা সুবিধা হয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা মার খাবেন, তা নিশ্চিত। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাঁদের সহায়তা দিতে পারে। ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়ও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তখন টাস্কফোর্স করে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের সহায়তা করা হয়েছে। অন্যান্য দেশও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে শুরু করেছে।