Originally posted in প্রথম আলো on 11 December 2023
গত তিন দশকে বিশেষত এক দশককালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উল্লেখযোগ্য অর্জনের মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করেছে। এরপরও খাতটি একটি কঠিন সময় পার করছে।
পাশাপাশি সবার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রেখে জীবাশ্ম জ্বালানির আধিপত্য থেকে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি কাঠামোতে রূপান্তরিত করার তাগিদ রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির আধিপত্যের কারণে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বর্তমানে মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সম্মুখীন।
এ সংকটগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতিরিক্ত সক্ষমতা, আমদানি করা জ্বালানির আধিপত্য, আর্থিক বোঝা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ইত্যাদি। এসব সংকট মোকাবিলা করতে আগামী দিনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
জ্বালানির প্রাপ্যতা
বাংলাদেশ মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০৯ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ২০২২ সালে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার ছিল ৪৬৪ কিলোওয়াট–ঘণ্টা।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা বেড়েছে। তবে যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সব মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যাচ্ছে কি না, তা এখনো প্রশ্ন। কেননা সরকার কয়েক দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষত গ্যাস, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে।
সরকার এ বছরের শুরুতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আর্থিক বোঝা কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম তিন দফায় ৫ শতাংশ করে বাড়ায়। ইউনিটপ্রতি দাম ৭ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে হয় ৮ টাকা ২৫ পয়সা। আমদানি করা এলএনজির বাজারদর বিবেচনা করে গত জানুয়ারিতে গ্যাসের খুচরা মূল্য ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বোঝা ভোক্তাদেরই বহন করতে হচ্ছে।
জ্বালানি মিশ্রণ
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি মিশ্রণে জীবাশ্ম জ্বালানির আধিপত্য রয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতার প্রায় ৯৬ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লা, ডিজেল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ ধরনের জ্বালানি মিশ্রণ কোনোভাবেই জ্বালানি রূপান্তরে সরকারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অনেক আগে থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের সিংহভাগ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ খাতে। প্রাকৃতিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ মজুত কমে যাওয়ার কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে।
দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে ইতিমধ্যে ১৯ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুত ৮ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যা ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আংশিকভাবে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এলএনজি সরবরাহ করা হয় মোট গ্যাসের চাহিদার প্রায় ২৬ শতাংশের সমপরিমাণ।
দেশীয় গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে কম। আমদানি করা এলএনজির দাম দেশীয় গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি।
দেশে আরও গ্যাস অনুসন্ধানের পরিবর্তে চাহিদা মেটাতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির প্রবণতা রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শুধু ১৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে। তারপরও গ্যাস কূপ খননের কোনো বড় প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।
সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ নতুন ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছে। সেটা হলে গ্যাস উৎপাদন ঘনফুট বাড়বে। এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি কূপ (অন্বেষণ ও মূল্যায়নসহ উন্নয়ন) খনন হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ
বাংলাদেশে চলতি শতকের প্রথম দশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থার পরিকল্পনা গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। তখন মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ২১০ মেগাওয়াট (জুন ২০০৪)।
২০০৬ সালে যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদল হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন বিদ্যুৎ খাত বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সরকারি হিসাবে তখন চাহিদা ছিল প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট। বেসরকারি হিসাবে তা ছিল প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট। বিপরীতে গড়ে মাত্র ২ হাজার ৬৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো (২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির হিসাব)।
২০০৯ সালের শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিল। সেই সরকারের আমলে ১ হাজার ১৬৪ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, অর্থাৎ গড় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ৩ হাজার ৬৪৬ মেগাওয়াট।
বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রধান অনুমান ছিল যে বাংলাদেশে প্রচুর অর্থনৈতিক ও শিল্প প্রবৃদ্ধি হবে, ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। তাই বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি–২০১৬) অনুযায়ী ২০২০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয় ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। যার বিপরীতে ২০২০ সালে স্থাপিত উৎপাদনক্ষমতা ছিল ২০ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল মাত্র ১২ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট (নির্দিষ্ট একটি দিনে)।
২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২৭ হাজার ৮৩৪ (অফ গ্রিড+অন গ্রিড) মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের প্রয়োজনের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানিসংকটে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার প্রায় অর্ধেক অলস বসে আছে।
বিদ্যুতের অব্যবহৃত উৎপাদনক্ষমতা ২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা ২০০৫ সালে মাত্র ৬ শতাংশ ছিল। অব্যবহৃত উৎপাদনক্ষমতার বিপরীতে পিডিবিকে বিপুল অর্থ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট (ভাড়া) হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিতে হচ্ছে। এই অর্থ অনেক ক্ষেত্রে সরকার সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না।
দেশে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের দৈর্ঘ্য বেড়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে, বিতরণ লাইন দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির হার বিগত বছরে কিছুটা ধীর হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে, সঞ্চালন লাইনের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৭২ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৯ হাজার কিলোমিটারে।
সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন বৃদ্ধির মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে, এটাই দুর্বল লোড ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান কারণ। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের জন্য সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনকে শক্তিশালী করা জরুরি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত ‘স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম’ প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করা, যাতে সৌর ও বায়ুর মতো পরিবর্তনশীল শক্তি গ্রিডে যুক্ত করা যায়।
ভর্তুকি ও আর্থিক দায়
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে চাপ পড়ছে। এ কারণে আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্য পরিশোধে সমস্যায় ভুগছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানিসংকটের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যুৎ খাতে বাড়তে থাকা ভর্তুকি সরকারের বোঝা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা ভুল জ্বালানিকাঠামোর কারণে সৃষ্ট।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত জাতীয় বাজেট থেকে সর্বোচ্চ ভর্তুকি বরাদ্দ পেয়ে থাকে, যা মোট ভর্তুকির ৩৯ শতাংশ। এই ভর্তুকি মূলত ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি), ভাড়াভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিপুল পরিমাণে ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ দিতে নেওয়া হয়।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ
নবায়নযোগ্য উৎস থেকে জ্বালানি উৎপাদনের বিষয়ে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা–২০১০ অনুযায়ী, তখন নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। যদিও তা এখনো অর্জিত হয়নি। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যা মোট সরবরাহের মাত্র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে জ্বালানি রূপান্তরের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনার (আইইপিএমপি) খসড়ায় ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্জনের প্রতিশ্রুতি সংশোধন করে ‘২০৪১ সালের মধ্যে ক্লিনার এনার্জি থেকে ৪০ শতাংশ’ করা হয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তন সরকারের এ বিষয়ে অবস্থানকে দুর্বল করে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে।
অবশ্য বর্তমান সরকার ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ২০২৩ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রায় ৩৭ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত প্রসারের জন্য বাংলাদেশে আরও বেশি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা প্রয়োজন।
নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি রূপান্তর
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসম্পর্কিত বেশ কয়েকটি মূলনীতি, আইন এবং বিধি রয়েছে। সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা পাঁচ বছরের জন্য এই খাতের দিকনির্দেশনা ঠিক করে থাকে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জ্বালানি স্বাধীনতা, সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা অর্জন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে প্রণীত হয়। এ পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ একটি ত্রুটিপূর্ণ আইন। কারণ, এ আইনের আওতায় সরকার প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগ করে। আইনটির ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে অপ্রতিযোগিতামূলক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সৃষ্টি এবং জ্বালানি রূপান্তরে বাধা হিসেবে কাজ করছে।
সর্বোপরি, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নীতিকাঠামো এখনো ‘কার্বন লক-ইন’ (জীবাশ্ম জ্বালানিতে আটকে থাকা) সমস্যার পক্ষে রয়েছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। একটি সংগতিপূর্ণ নীতি সংস্কার ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে জাতীয় নির্ধারিত মানদণ্ডে (এনডিসি) উল্লিখিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার করে জ্বালানি রূপান্তর অর্জন করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণে নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে চারটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট অবস্থান প্রয়োজন—ক. দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, খ. স্পষ্ট নীতি নির্দেশনা, গ. নির্দিষ্ট দায়িত্বসহ একটি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং ঘ. পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষ বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালানিনীতি পরিবর্তন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী গবেষণা সহযোগী, সিপিডি