Interview published in Kaler Kantho on Monday, 13 July 2015.
বিশেষ সাক্ষাৎকার : ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
দুর্নীতি দূর করাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর আজীবন সদস্য। তাঁর গবেষণা ও লেখালেখির মূল বিষয় ট্রেড পলিসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি, কারখানার পরিবেশ ইত্যাদি। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের পর নতুন চ্যালেঞ্জ, ভবিষ্যৎ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কালের কণ্ঠকালের কণ্ঠের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শারমিনুর নাহার
কালের কণ্ঠ : বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই সাফল্যের ক্ষেত্রে কোন নিয়ামকগুলো ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : বাংলাদেশ কিছুদিন থেকেই একই মাত্রার একটি অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে আছে। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ভেতরেই ওঠানামা করছে। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের সূচকের যেখানে নানা মাত্রায় উত্থান-পতন হয়েছে সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। এ থেকে হয়তো মনে হতে পারে, আমরা ৬ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হতে পারিনি, আবার অন্যদিকে বলা যায় এটা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল সময়কালে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল গড়পড়তা ৪২তম। এর ফলে অর্থনীতিতে একচেটিয়া সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিশেষ সূচকের ভূমিকা রয়েছে। মূলত মাথাপিছু আয়, মুদ্রা বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতি- এই তিনটি সূচকের কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অন্যদিকে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাবনতিও ভূমিকা রেখেছে।
তবে মনে রাখা দরকার, এই অর্জন কোনো সরকারের একক কৃতিত্ব নয়। এটা ধারাবাহিকভাবে দশকজুড়েই হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেসরকারি খাতের ভূমিকা। সাধারণ মানুষের বেসরকারি খাতে অংশগ্রহণের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। কৃষি, শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কুটির শিল্পসহ নানা ধরনের সেবা খাতের এ ভূমিকা রয়েছে। কৃষির উৎপাদন বেড়েছে, শিল্পের রপ্তানি আয় নিশ্চিত হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যদিও এখনো সেই প্রক্রিয়ার মানে যে সামগ্রিক উন্নতি দরকার, তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ওঠানামা করছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। যদিও সামগ্রিকভাবে সরকারের বেসরকারি খাতের যে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কালের কণ্ঠ : বিগত তিন বছর ধরে প্রবৃদ্ধির মাত্রা স্থিতিশীল রয়েছে। যদি এ অবস্থান ধরে রাখা না যায় অথবা যদি নেমে যায়, তাহলে কি আমরাও নেমে যাব?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : হ্যাঁ, যাব। তবে এটা ঠিক যে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হতে হবে। অর্থাৎ গড়পড়তা বিশ্বব্যাপী সূচক যেখানে গিয়ে একত্রিত হয় আমরা যদি সেখানকার চেয়ে নিচে নেমে যাই, তাহলে বর্তমান র্যাঙ্ক থেকে নেমে যাব। তবে আগামী বছর আমরা ৭ শতাংশ টার্গেট করেছি। ২০২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করছি। এটা থাকলে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা।
কালের কণ্ঠ : মাথাপিছু আয় বাড়ালে অনেক ক্ষেত্রে আয় বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগোতে হলে কোন কোন প্রতিবন্ধকতাকে পার হতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : হতদরিদ্র দেশ থেকে যখন আমরা দারিদ্র্যমুক্ত দেশের কাতারে ঢুকছি, তখন মনে রাখা দরকার যে দেশের ভেতরে এখনো সাড়ে ২৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। আমাদের মাথাপিছু দৈনিক আয় তিন ডলার। সুতরাং বড় কোনো অর্জন আমরা করতে পারিনি। আরো ভেঙে বললে এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় চার কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। অন্যভাবে বললে এতসংখ্যাক মানুষ এখনো কর্মহীন। তাদের কর্ম নিশ্চিত করা যায়নি বা যাচ্ছে না। এটা ঠিক যে বৈষম্য রয়েছে। তবে বৈষম্যের মধ্যকার গ্যাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা এখন অর্থনীতির যে কাতারে ঢুকেছি সেটা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর একেবারে শুরুর দিকে। এই ক্যাটাগরিতে আরো ৫০টি দেশ রয়েছে। সেখানে ভারতও রয়েছে। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা এসব দেশও রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : এসব দেশ তো কিছুটা সামনে, আমাদের এ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জগুলো কী?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : আমরা আয়বৈষম্য কমিয়ে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে পারব কি না তা আসলে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এখনই সেই লক্ষ্যে কাজ করার মতো কাঠামো বা পরিস্থিতি কোনোটাই আমাদের নেই। দেশীয় অর্থনীতিতে এখনো বড় বড় অনেক জায়গায় কাজ করতে হবে। দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব দূর করা। এগুলোই এখন বড় ফোকাস। সরকার এই জায়গাগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই এখনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। আর আয়-বৈষম্যের বা শ্রেণির সমস্যা আমাদের একার নয়। সব দেশেই আছে। ভারত আয়-বৈষম্য কমানোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করছে। যা দরিদ্র মানুষগুলোর মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। ন্যূনতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারে। সে চেষ্টা আমাদের এখানেও আছে। সরকার সোশ্যাল সেফটিনেসের প্রকল্প দীর্ঘদিন থেকেই পরিচালনা করে আসছে। তার প্রত্যক্ষ কিছু ফলও পাওয়া গেছে। এখন প্রয়োজন সোশ্যাল সেফটিনেসকে সোশ্যাল সিকিউরিটিতে রূপান্তর করা। সামাজিক বেষ্টনীকে সামাজিক নিরাপত্তার মানদণ্ডে বিবেচনায় আনা।
কালের কণ্ঠ : এটা গেল শুধু একটি প্রসঙ্গ…
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : যতই বলছি যে আমরা ওপরের দিকে যেতে চাই, সেটা অবশ্যই প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কারণেই সম্ভব হবে। তবে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে বেসরকারি খাত। সে জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, দারিদ্র্যের হার কমাতে যেটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সরকার নতুন যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিচ্ছে সেখানে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব কিছু টার্গেটও আছে। এগুলো ছাড়াও উৎপাদনশীল খাতের (প্রডাক্টিভ রিসোর্স) সৃষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শুধু কৃষি নয়, শিল্প খাতেও উৎপাদন বাড়াতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে যে বিনিয়োগ করা হচ্ছে সেটা বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সেটা এখন পরিমাপ করতে হবে। অর্থাৎ যে পরিমাণ ব্যয় করা হচ্ছে সেই পরিমাণ ফেরত আসছে কি না। আমরা শিক্ষা খাতে যে খরচ করছি তার গুণগত মান বাড়ছে কি না। এখন পর্যন্ত সরকারের বেশি ব্যয় হচ্ছে ব্রডার স্কেলে; সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে। সরকারের কমিটমেন্ট অবশ্য সেখানেই থাকে যে সে এক সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসেবা নিশ্চিত করতে পারল। কিন্তু কতখানি ব্যয় হলো এবং কী পরিণাম ফেরত এলো, সরকারের এখন তা পরিমাপ করার সময় এসেছে। আমি যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি তা গুণগতভাবে ভালো কি না! যে শিক্ষাসেবা দিচ্ছি তা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে কি না! যে শ্রমিক কারখানায় কাজ করছে, তার কাজের পরিবেশটা যথাযথ কি না। তার কাজের মান ভালো কি না ইত্যাদি। অর্থনীতির ভাষায় আমরা বলি আনুভূমিক থেকে এখন উল্লম্ফভাবে, হরাইজেন্টাল থেকে ভাটিক্যালি দেখতে হবে। গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে।
কালের কণ্ঠ : দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে গিয়েছে। তাদের কোন দিকগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : ভালো বলেছেন, শ্রীলঙ্কা আমাদের জন্য ভালো উদাহরণ হতে পারে। শুরুতে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির কারণটা বলি। প্রথমত, তার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ফলে এই জনসংখ্যাকে সে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে পেরেছে। সেখানে সাধারণভাবে সবার ইংরেজির মান ও কম্পিউটারের দক্ষতা রয়েছে। দেখা যাবে, দেশের বাইরে যারা কাজ করছে, তারাও অনেক উচ্চ অবস্থানে। আবার আমাদের মতো সস্তা গার্মেন্ট পণ্য সে তৈরি করে না। এটা গুণগতভাবে পৃথক। দ্বিতীয়ত, শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো পর্যটন খাত। তারা নিজেদের যা আছে তাকেই ঢেলে সাজিয়েছে। ট্যুরিস্টবান্ধব পরিবেশ বলতে যা বোঝানো হয়। বিপরীতভাবে আমরা এখনো এখানে দৃষ্টি দিতে পারিনি। তৃতীয়ত, তার কিছু কৃষিপণ্য আছে। যেমন- চা, মসলা ইত্যাদি তারা রপ্তানি করে। একটি দুটি দেশ নয়, সারা বিশ্বেই তাদের মসলার সুনাম প্রাচীনকাল থেকেই। মূল কৃষিপণ্য না হলেও এই পণ্যগুলো তাদের রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধ করেছে। চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের যে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আছে সেটাও তাদের প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। হয়তো আমাদের দেশের বিদেশি সহায়তা এসেছে বা আসছে; কিন্তু তুলনামূলকভাবে তাদের বেশি। কারণ যদি জনসংখ্যা অনুপাতে হিসাব করি তাদের বেশি হবে।
কালের কণ্ঠ : শ্রীলঙ্কায়ও একসময় রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। তার মধ্যেই তারা কিভাবে এগোল…
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : এটা ঠিক যে তাদের ওখানেও পুরো এক দশকের বেশি সময়জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। সেই অস্থিরতার মধ্যেই তারা এগোনোর চেষ্টা করেছে। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন পুরোমাত্রায় স্থিতিশীল হয়েছে তখন আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে একটা বুম ঘটে গেছে। একটা মজার বিষয়, শ্রীলঙ্কার জ্বালানি কিন্তু আমদানিনির্ভর। এ ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু এগিয়ে। কিন্তু এই আমদানিনির্ভর জ্বালানিকেই সে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাওয়ার পর যে এলাকাগুলোতে আগে যাওয়া যেত না, এখন সেখানে নতুন করে পুনর্বাসন হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ছে। তারা সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করতে পেরেছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা, সুবিধা দিতে পেরেছে, যা আমরা এখনো পারিনি।
কালের কণ্ঠ : নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের অর্থনীতির সূচকে বৈদেশিক রেমিট্যান্স সহায়তা করেছে- এটা কি আরো বাড়ানো যেতে পারে না?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : আমরা সিপিডি থেকে সব সময় একটা উদাহরণ দিই যে আমাদের সমপরিমাণ লোক ফিলিপাইনে, যারা বাইরে কাজ করে। কিন্তু আমাদের রেমিট্যান্সের তুলনায় তাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ দ্বিগুণ। কিভাবে? প্রধান কারণ ফিলিপাইনের যারা বাইরে কাজ করে তারা কেউ হোটেল বয় নয়, ক্লিনার নয়। তারা ম্যানেজমেন্টে কাজ করে, নানা ধরনের সেবা খাতে কাজ করে। এখন বাংলাদেশের একজন শ্রমিক যখন বাইরে যাচ্ছে, তার যে চ্যানেল সেও কিন্তু হোটেলেই কাজ করে। সুতরাং অবধারিতভাবে সেও সেখানে বা তেমন প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। আর ফিলিপাইনের চ্যানেলই আলাদা, উচ্চপর্যায়। ফলে অফিসার লেভেলের কাজ পাচ্ছে একজন নতুন লোক। এদিকগুলো সরকারকে ভাবতে হবে। সরকারের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। আমরা সেবা খাতে বা অন্যান্য দক্ষ কাজের ব্যাপারে আমাদের সুনাম রয়েছে, আমাদের দক্ষতা রয়েছে এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আনতে হবে। সেই চ্যানেলগুলোকে সামনে আসতে হবে। সরকারের জনশক্তি রপ্তানির নীতিমালা, কর্মপদ্ধতি, কৌশল সবটার মানোন্নয়ন জরুরি। শুধু সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা নয়, গুণ ও মানের দিক ভাবতে হবে। মনিটরিং সিস্টেম উন্নত করতে হবে। উপযুক্ত লোককে উপযুক্ত কাজে বসাতে হবে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে গুরুদায়িত্ব দিলেই তো হবে না।
কালের কণ্ঠ : মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে চ্যালেঞ্জগুলো বললেন, সেগুলোর জন্য সরকারের যথাযথ প্রস্তুতি, মনোভাব দেখতে পাচ্ছেন কি?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : সরকারের তো সব সময় একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে। সে অনুযায়ী তাকে পরিচালিত হতে হয়। কিন্তু এখন আসলে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার বাস্তবায়নের জন্য যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ মনিটরিং জরুরি। আর সবচেয়ে বড় বিষয় দুর্নীতি দূর করতে হবে।
দুর্নীতি দূর করতে না পারলে আমরা কোনো লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারব না। এখানে একটা উদাহরণ দিই, পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চলমান আরো দু-একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমন করা হয়েছে। আমি বলছি না যে আমার টাকা নেই বলে বিশ্বব্যাংক থেকে নেব। কিন্তু যদি আমরা বাইরের অর্থ নিতাম, তাহলে সেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকত। তাদের একটা কমিটমেন্ট থাকত। কাজ ভালো হতো। এখন এর ব্যয় কত হবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না। সুতরাং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অবশ্যই জরুরি। কিন্তু সেই সঙ্গে দুর্নীতি, সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। দুর্নীতি দূর করে কাজে স্বচ্ছতা আনাও এখন সরকারের চ্যালেঞ্জের একটি অংশ।
কালের কণ্ঠ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।