Originally posted in jagonews24 on 8 March 2025
সফল নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় খুবই নগণ্য। নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যে ধরনের নীতি ও পরিবেশ দরকার তা অনুপস্থিত। ফলে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি।
জাগো নিউজ: একজন সফল অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে কী ধরনের বাধা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ড. ফাহমিদা খাতুন: বর্তমানে দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা খুবই কম। যারা আছেন তাদের অনেকেই আবার পারিবারিক সূত্রে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পথে অন্তরায় অনেক। নারীদের জন্য নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে অর্থপ্রাপ্তি একটি বড় বাধা। কোনো নারীকে ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংক আগ্রহী নয়। অন্যদিকে যারা দিতে চান তারা এমন সব শর্ত আরোপ করেন যা একজন নারীর পক্ষে পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগকারীকে ঋণ দিতে আগ্রহী নন তারা। বড় ধরনের ব্যবসা কিংবা যাদের সঙ্গে লেনদেন আছে শুধু তাদেরই ঋণ দেন। ফলে নতুনদের জন্য ঋণ পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক সময় নারী উদ্যোক্তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
এছাড়া বিজনেস লিটারেসির অভাব রয়েছে। অনেকে জানেন না কোথা থেকে ঋণ পাওয়া যায়। কিংবা কীভাবে পেতে হয়। এর পাশাপাশি আরেকটি বড় বাধা হয়েছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে অনেকেই নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ইতিবাচকভাবে দেখে না।
একজন নারীর জন্য দেশে অ্যানাবেলিং বিজনেস এনভায়রনমেন্ট বিরাজ করে না। ফলে নতুন ব্যবসা শুরু করতে সামাজিক, আর্থিক এবং নীতিগত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয় একজন নারীকে। এক কথায় বলা যায় বর্তমানে যে ধরনের পরিবেশ রয়েছে তা একজন নারীর নতুন করে ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকে না।
জাগো নিউজ: প্রচলিত এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কী প্রয়োজন?
ড. ফাহমিদা খাতুন: প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে সর্বপ্রথম দরকার পারিবারিক সমর্থন ও সহযোগিতা। আমাদের সমাজব্যবস্থা সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং যে ধরনের নীতি ও আইন রয়েছে তা পরিপূর্ণ নারীর উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে উপযোগী নয়। এক্ষেত্রে সরকারকে নীতির পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবার থেকে নারী সদস্যদের ব্যবসায়ী উদ্বুদ্ধকরণে আর্থিক ও মানসিক সমর্থন জোগাতে হবে।
নারীর সত্যিকারের এমপাওয়ারমেন্ট তৈরির জন্য যে নীতি প্রয়োজন সেটা অনুপস্থিত। পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুগুলোতে পরিবর্তন আনা জরুরি। আশার কথা হলো এ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অনেকে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবলের কারণে সফল হয়েছে।
জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা না চাকরি?
ড. ফাহমিদা খাতুন: নারীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে নারীদের এন্টারপ্রেনার বা উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একজন নারী নিজে উদ্যোক্তা হলে একটি চাকরির পরিবর্তে সে আরও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে অন্যের চাকরি করার চেয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করার পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে আনন্দ বেশি।
জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আপনার সুপারিশ কী?
ড. ফাহমিদা খাতুন: উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ যেমন অনলাইন ট্রেনিং, অফলাইনে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদনকৃত পণ্যের বাজারজাতকরণে সরকার এবং এসএমই ফাউন্ডেশনসহ যত ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে না পারলে একজন উদ্যোক্তার জন্য টিকে থাকা কঠিন। তাই দেশীয় এবং বিদেশি ক্রেতা ধরতে বিভিন্ন ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।