Published in প্রথম আলো on Wednesday, 8 March 2017
আইএলও ও গ্যালাপের প্রতিবেদন: পরিবর্তন আনব দৃঢ় থাকব
দেশের ৫০% মানুষ চান নারীরা চাকরি করুক
সংসার সামলে অনেক নারীই বাড়ির বাইরে গিয়ে চাকরি করেন। আবার ইচ্ছা থাকলেও অনেক নারী পারিবারিক বাধার কারণে তা পারেন না। তবে পরিবারের নারী সদস্যরা চাইলে চাকরি করবেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ মানুষেরই সম্মতি আছে। লিঙ্গভেদে হিসাব করলে ৪২ শতাংশ পুরুষ ও ৫৬ শতাংশ নারীই এমনটি চান।
বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় ৫০ শতাংশ মানুষের সম্মতির বিষয়টি অনেকের কাছে সন্তোষজনক মনে হলেও হতে পারে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপাল থেকে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। নারীর চাকরির বিষয়ে নেপালের ৮১ শতাংশ ও ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষের মনোভাব ইতিবাচক।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘নারী ও তার কাজের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে: নারী ও পুরুষের কণ্ঠ’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
নারীর চাকরির বিষয়ে বিশ্বের ৬৮ শতাংশ মানুষের সম্মতি আছে। এ বিষয়ে ৭০ শতাংশ নারী ও ৬৬ শতাংশ পুরুেষর মনোভাব ইতিবাচক। এ ক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিতে এগিয়ে উত্তর আমেরিকা ও পিছিয়ে আরব দেশগুলো। উত্তর আমেরিকার ৭৯ শতাংশ নারী ও ৫৯ শতাংশ পুরুষের মনোভাব ইতিবাচক। আরব দেশগুলোর ৬২ শতাংশ নারী ও ৫২ শতাংশ পুরুষের নারীর চাকরিতে সম্মতি আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৫২ শতাংশ নারীর মনোভাব এ িবষয়ে ইতিবাচক।
আইএলও জানিয়েছে, গত বছর ১৪২টি দেশের প্রায় ১ লাখ ৪৯ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন বাংলাদেশের এক হাজার মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর চাকরির বিষয়ে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ মানুষের সম্মতি আছে। বয়সভেদে হিসাব করলে ১৫-২৯ বছর বয়সী ৫২ শতাংশ ও ৩০ বছর বয়সী ৫০ শতাংশ মানুষ চান নারীরা চাকরি করবেন। আবার মাধ্যমিক পাস করা ৫৭ শতাংশ ও প্রাথমিক পাস করা ৪৩ শতাংশ মানুষ এমনটি চান। অন্যদিকে নারীর চাকরিতে সম্মতি নেই ৪৬ শতাংশ মানুষের। লিঙ্গভেদে হিসাব করলে ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ নারী এই কাতারে আছেন।
নারীর চাকরির বিষয়ে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষের নিজেদের মনোভাব পৃথকভাবে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। মাত্র ১১ শতাংশ নারী চাকরিকে অগ্রাধিকার দেন। ৪৬ শতাংশ নারীর কাছে চাকরির বদলে বাড়িতে থাকাই পছন্দের। তবে ৩৯ শতাংশ নারী দুটোই করতে চান। ৪ শতাংশ নারী এসব বিষয়ে কোনো মতামত দেননি। অন্যদিকে মাত্র ১০ শতাংশ পুরুষ নারীর চাকরিকে অগ্রাধিকার দেন। নারীর বাড়িতে থাকাটা ৫৭ শতাংশ পুরুষের পছন্দ। তবে দুটোতেই সায় আছে ৩২ শতাংশ পুরুষের।
পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ও অসম্মতির বাইরে সংসার ও অফিসের কাজের মধ্যে সমন্বয়, সন্তানের লালনপালন, পুরুষকর্মীদের অশোভন আচরণ ও হয়রানি, কাজের সময় নমনীয়তা নেই, ভালো বেতনের চাকরির অভাব, একই কাজ করে পুরুষের চেয়ে কম বেতন, নিরাপদ যাতায়াত ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় নারীদের। চ্যালেঞ্জগুলো সব দেশের নারীদের জন্যই কমবেশি প্রযোজ্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ শীর্ষক এক জরিপে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ওই জরিপে উল্লেখ ছিল বাংলাদেশে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ নারী পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আর স্ত্রীকে অল্পসংখ্যক স্বামীই উপার্জনের স্বাধীনতা দেন। তবে যাঁরা দেন, সেসব স্বামীর ৯৩ দশমিক ১৯ শতাংশই স্ত্রীর উপার্জন করার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীর চাকরির বিষয়ে ৫০ শতাংশ মানুষের সম্মতি কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। আমরা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। আমরা উন্নত দেশ হতে চাইছি। কিংবা আমরা যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই, সে জন্য আরও বেশিসংখ্যক নারীকে কর্মক্ষেত্রে আসতে হবে।’তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেসব সমস্যায় পড়েন, সেসব যথাযথভাবে সমাধান করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।