Published in কালের কন্ঠ on Saturday, 21 April 2018
প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ না পেয়ে ছিটকে পড়ে গার্মেন্টের মেয়ে
এম সায়েম টিপু
নারী শ্রমিকের হাতে সুঁই-সুতার সেলাই নিয়ে বিশ্বজয় করেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। বর্তমান সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কারখানায় সংযোগ হয়েছে নানা প্রযুক্তি। কিন্তু মানানসই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক নারী শ্রমিক এ খাত থেকে ছিটকে পড়ছে। তারা ধানের চাতাল কিংবা গৃহকর্মসহ অন্যান্য কাজে যোগ দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আশির দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন শুরু নারী শ্রমিকের হাতেই। তখন মজুরি বলতে তেমন কিছুই ছিল না। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সমাজে মূল্যায়নও ছিল না। সেই অবস্থায় বেকার থাকা পুরুষদের আকর্ষণ করতে পারেনি গার্মেন্টসের চাকরি। তাই নারী শ্রমিকদের ওপর ভর করেই এ শিল্প এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানিতে এই সেরা অবস্থান পেতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি সুবিধা নিতে ব্র্যান্ডিং হিসেবে সরকার ও পোশাক মালিকরা তুলে ধরেছে এই খাতের ৪০ লাখ নারী শ্রমিককে। এ অবস্থায় পোশাক খাতে নারী শ্রমিক কমার বিষয়টি তৈরি পোশাক শিল্পে দীর্ঘ মেয়াদে শ্রমিক সংকট আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি তৈরি পোশাক কারখানা নিয়ে বেসরকারি খাতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগও (সিপিডি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতেও বলা হয়, ২০১৫ সালে পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৪ শতাংশ। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬০.৮ শতাংশে। এতে আরো বলা হয়, নারীর তুলনায় পুরুষ কর্মীরা ৩ শতাংশের বেশি মজুরি পাচ্ছে। সেখানে পুরুষের গড় মজুরি সাত হাজার ২৭০ টাকা আর নারী শ্রমিকের মজুরি সাত হাজার ৫৮ টাকা। দেশের ১৯৩টি পোশাক কারখানার দুই হাজার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে তারা এই প্রতিবেদনটি দেয়।
গবেষণায় বলা হয়, কারখানায় যন্ত্রনির্ভশীলতা বাড়ার কারণে পোশাক খাতের নারী শ্রমিক কমছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ৬ ও ৭ গ্রেডের শ্রমিকই বেশি। মজুরি বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়ার সম্ভাবনা থেকে মালিকরা ব্যয় কমাতে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচেছ। এ ছাড়া নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে যন্ত্র চালানোতে কম জ্ঞান রাখে। ফলে মালিকরা পুরুষ শ্রমিককে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে ভবিষ্যতে নারী শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, নারীদের কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণের খাত পোশাক । এ জন্য নারী অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্ষেত্রে সরকার এবং অংশীজনদের নীতিগতভাবে উচিত হবে নারীবান্ধব কারখানার পরিবেশ নিশ্চিত করা, এদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নারী শ্রমিক বৃদ্ধির জন্য কারখানা পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের ব্যবস্থা নেওয়া।