Originally posted in কালের কন্ঠ on 12 May 2021
কালের কণ্ঠ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে গত ৯ মে ২০২১ ‘কোভিড পরিস্থিতিতে জেন্ডারবান্ধব বাজেট: নারীর অমূল্যায়িত কাজের মূল্যায়ন’শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) প্রদত্ত বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার।
সাম্প্রতিককালে নারীর অমূল্যায়িত শ্রমের ধারণা ও পদ্ধতিগত পর্যালোচনার একটা বিরাট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কবির ভাষায় – তুমি যদি অন্ধ হও এবং আমার সৌন্দর্য দেখতে না পাও, তার মানে এটা নয় যে সেটা বিরাজমান নয়। আমরা যদি অন্ধ হই, নারীর শ্রমের প্রকৃত মূল্য দেখতে না পাই তার মানে এই নয় যে তার শ্রমের মূল্য নেই।
এটা স্বীকার করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকেও বিগত সময়ে বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন এসেছে। পাসপোর্টে পিতার নামের সঙ্গে মাতার নাম যুক্ত করা হয়েছে। এটি যেমন একটি বড় অগ্রগতি। সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করেছে, এটাও একটি বড় ধরনের স্বীকৃতি। যাঁরা মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন ছুটি শেষে তাঁরা যেন পুরনো কর্মস্থলে যথাযোগ্যভাবে ফিরে যেতে পারেন তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে নারীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ধর্মগুরুরা নারীবিদ্বেষী কথা বলেন। অথচ সেটার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাদের কোনো বক্তব্য নেই। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য নারীর স্বাধীনতা ও কাজের মূল্যায়ন কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় কখনো দেখিনি। এটা বড় ধরনের ঘাটতি। এটার পরিবর্তনের সূত্রপাত হতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে ও স্কুলে অখন্ড মানবতার শিক্ষা দিতে হবে।
সংসদে ও বাইরে নারীর কাজের মূল্যায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকতে হবে। নারীর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকতে হবে। আবার পাশাপাশি নারীকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। আমরা জানি সংরক্ষিত আসনের একজন নারী এমপি কত ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকেন। উপজেলার সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা কেন প্রত্যক্ষ নির্বাচনে আসবেন না?
মূল কথা হচ্ছে নারী অধিকারের আইনি ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আইনি স্বীকৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ নারী ও পুরুষকে সমান আইনি দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাঁকে সম্পত্তির সমঅধিকার দিতে হবে। শিশুর ওপর অভিভাবকত্বের অধিকার থাকতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদেও সমঅধিকার থাকতে হবে। আইনি ভিত্তি পরিষ্কার করতে হবে এবং অবমূল্যায়িত কাজকে আইনি স্বীকৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রচলনের মধ্য দিয়ে নারীর সামগ্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পরিবারে সন্তানকে এসব বিষয়ের ওপর মানবিক মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মান্ধতার ভেতর যে বৈষম্যের ধারনা আছে, সেটাকে উন্মোচন করতে হবে। মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নারীর অধিকারের ওপর বিতর্ক আরো জোরদার করতে হবে।