Originally posted in প্রথম আলো on 5 June 2022
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। এবারের বাজেটে তাই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়তার দরকার হবে। নিম্ন আয় ও নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির আওতা ঢাকার বাইরে বিস্তৃত করা দরকার। খাদ্যসহায়তা ও নগদ সহায়তার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
আগের তুলনায় খাদ্যপণ্যের প্রাপ্যতা বাড়ানো, ভিত্তি বা আওতা বাড়ানো এবং আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিও জোর দিতে হবে সরকারকে। বাজেটে সে সংস্থান থাকা উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হয়তো পরে কমে যাবে। তখন আমরা একটা স্বস্তি পাব। তার আগে এখন এসব কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।
সরকার রোজার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক–করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছাড় দিয়েছিল। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দাম না কমা পর্যন্ত আবারও শুল্ক–কর সমন্বয় করা যেতে পারে। এতে নিত্যপণ্যের দাম একটু সহনীয় হতে পারে।
সংকট কাটাতে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে। পণ্য আমদানির খরচের চাপ বাড়লেও এই সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। একটা পর্যায়ে এসে ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল হবে। এর আগে ২০১২ সালেও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় ডলারের বিনিময় মূল্য ৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪ টাকায় উন্নীত হয়েছিল।
পরে আবার ৮১ টাকায় নেমে স্থিতিশীল হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করার মাধ্যমে মূল্যের চাপ ঠিক করা দরকার। আমাদের এখানে আমদানিকারক ও উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল। দুর্বল ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নেয় বেশি। এই ব্যবস্থাপনা উন্নত করা গেলে ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া যায়।
নিত্যপণ্যের বাজার যখন খুব অস্থির হবে, তখন এটিকে স্থিতিশীল রাখতে সরকারের হাতে যে মজুত থাকে তার কৌশলী ব্যবহার করতে হবে। সরকারের হাতে ১২-১৩ লাখ টন চাল–গমের মজুত থাকে। বাজার অস্বস্তিকর পর্যায়ে গেলে সুবিধামতো সময়ে মজুত ছেড়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে সরকার।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ দিয়েছে অনেক দেশ। সংকটকালে বৈশ্বিক বাজারে খোঁজখবর রাখা উচিত যাতে কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আভাস পাওয়া যায়। আবার সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য বৈশ্বিক বাজার অনুসন্ধানে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। তাহলে হঠাৎ করে বিপদে পড়তে হবে না।
এবারের সংকটের কথা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এখন খাদ্যপণ্যের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে নজর দিতে হবে।
কৃষি গবেষণা, প্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এতে আমরা যেসব পণ্য উৎপাদন করি, সেগুলোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে। আমদানিনির্ভর যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন করা যাবে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়লে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।
মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)