Published in শেয়ার বিজ on Tuesday, 6 March 2018
৪ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি নতুন পাটনীতির খসড়া
জাকারিয়া পলাশ
দেশে পাট খাতের ব্যবস্থাপনার জন্য বিদ্যমান নীতিটি ২০১১ সালে প্রণীত। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের নানা পরিবর্তন হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা খাতে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রয়োজন সৃৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্নয়নের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে যুক্ত করা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে বিদ্যমান পাটনীতির রয়েছে নানা অসামঞ্জস্য। এজন্য গত চার বছরে নতুন পাটনীতি প্রণয়নে নানা বৈঠক হয়েছে, কিন্তু তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্রমতে, ২০০২ সালে ঘোষিত পাটনীতিকে সর্বশেষ ২০১১ সালে হালনাগাদ করে সরকার। সর্বশেষ প্রকাশিত ওই পাটনীতিতে বলা হয়, ‘পাটশিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পাটনীতি যুগোপযোগী ও পরিমার্জন করে প্রণীত হলো।’ পরে ২০১৪ সালে পুনরায় পাটনীতি হালনাগাদ করার জন্য একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত করা হয়নি। ২০১৬ সালে নতুন ভাবে পাটনীতি হালনাগাদ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফের পিছিয়ে যায়। তারপর আর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
এভাবে বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়েছে বিদ্যমান পাটনীতি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শহীদুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘২০১৬ সালের অক্টোবরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ কাদের সরকারের সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত পাটনীতি-২০১৬-এর খসড়া চূড়ান্ত করার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় পাট খাতসংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পাটনীতি আলোর মুখ দেখেনি।’
তিনি আরও বলেন, নানারকম আইন ও বিধিমালা বিদ্যমান থাকলেও তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় না আমাদের দেশে। তবুও পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সুনির্দিষ্ট পাটনীতি থাকলে তার ভিত্তিতে স্টেকহোল্ডাররা খাতের উন্নয়নে কাজ করতে পারে।
পাটনীতির বিষয়ে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সে সময়ই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় পাটনীতিকে যুগোপযোগী করা এবং তার বাস্তবায়নে কৌশলপত্র তৈরির প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালের পাটের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় ওই প্রস্তাবিত নীতি অনুমোদন ও বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।
সে সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব) মো. রেজাউল কাদের ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সম্প্রতি শেয়ার বিজকে জানান, ‘২০১৬ সাল পর্যন্ত পাটনীতির সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এটুকু জানি। এরপর তার অগ্রগতি সম্পর্কে আমার স্পষ্ট জানা নেই।’
যদিও এরই মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট খাতের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। দেশের অভ্যন্তরে ১৭টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ের জন্য পাটব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে দেশেই পাটব্যাগের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্যতামূলক ঘোষিত ওইসব পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটপণ্য ব্যবহার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু এ অগ্রগতির বিষয়টি পাটনীতিতে হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে ভারতের বাজারে পাটপণ্য রফতানিতে পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ হয়েছিল গত বছর। ওই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজারে পাটপণ্য রফতানিতে সমস্যা হলেও তুরস্ক, মিসরসহ অন্যান্য বাজারে রফতানি বৃদ্ধির কারণে ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। ওই পরিস্থিতিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে পাল্টা অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপসহ নানা পরামর্শ এসেছে, যার বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান পাটনীতি বিশ্ববাজারের ওইসব পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কৌশল বলতে পারছে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটনীতি-সংক্রান্ত বিষয়ে একের পর এক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন কিন্তু নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে না। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জেসমিন নাহারকে পাটনীতি হালনাগাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানান, ‘আমি এখনও পাটনীতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারব না, কেননা এখনও এ-সংক্রান্ত দায়িত্ব বুঝে পাইনি। তবে শিগগিরই পাটনীতি হালনাগাদ করার জন্য কাজ শুরু করব।’
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পাটনীতির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যে খসড়াটা করা হয়েছিল সেটিকে সামঞ্জস্যহীন বলা যায় না, কিন্তু সেটা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিলম্ব কাম্য নয়। দ্রুততর সময়ে এটা মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ করা উচিত। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নীতিতে যেসব বিষয় লেখা থাকে তার বাস্তবায়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দেখা যায় না। নীতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পক্ষের তাগিদের ঘাটতি দেখা যায়। শুধু নীতি প্রণয়ন নয়, তা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাকশন প্ল্যান করা দরকার।’