Published in ভোরের পাতা on Tuesday, 14 March 2017
সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে পাট শিল্প
আক্তার হোসেন
সোঁনালী আশ পাটের চট ও বস্তা হিসেবে ব্যবহারে সুপরিচিত থাকলেও পাটের শাড়ি, জুতো থেকে বেড কভার, কুশন কভার, সোফা কভার, কম্বল, পর্দা, টেবিল রানার, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, ডোরম্যাট, শতরঞ্জি, ব্লেজার, ফতুয়া কটি, সো-পিস এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য বহুবিধ পাটপণ্য ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ খাতের সম্ভাবনা দেখে এগিয়ে আসছেন উদোক্তারাও। ফলে আবারও পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আসবে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
এক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। রপ্তানি আয়ের অধিকাংশ অর্জিত হতো এ পাট থেকে। যদিও বিএনপি সরকারের আমলে বহু পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যা বিশ্বব্যাংকের পরমর্শে করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ভারতে আর্থিক সহায়তা দিয়ে ১০টি পাটকল স্থাপন করে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের পাটশিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার সেসব ষড়যন্ত্র থেকে পাটশিল্পকে পুনরুদ্ধার করার সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।
যদিও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রতিবছর লোকসান হয় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোকসান হতেই পারে। তবে বিজেএমসির লোকসানের অন্যতম কারণ এ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বলে মনে করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
এ নিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আবার পাট শিল্পে তার হারানো গৌরব ফিরে আসবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বিএনপি সরকার আদমজি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার এ খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। বস্ত্র খাতে ৩০ বছরে যে অর্জন সাধিত হয়েছে আগামী পাঁচ বছরে পাট খাত সে জায়গা দখল করবে। পাটশিল্প আবারও বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যে পরিণত হবে।
রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে চলমান বহুমুখী পাটপণ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ব্যাপক উৎসাহ ও চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় পাটপণ্যের ৬১টি স্টল বসেছে, যেখানে ৯৫ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ পলিথিন। এটি নিষিদ্ধ করে আইন হলেও রোধ করা যাচ্ছে না এর উৎপাদন ও ব্যবহার। ফলে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ‘পাটের পলিথিন’ ব্যাগ তৈরি করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। আগামী জুন মাসে বাজারে আসছে এই ব্যাগ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, পাটশিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ১৭টি পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। তবে এই কাজগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কি-না, তার জন্য মনিটরিং করতে হবে। বৈশ্বিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এখানেও বড় বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ১৯৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া শুরু হয়। ওই বছর বেসরকারিকরণ বোর্ড (পরে বেসরকারিকরণ কমিশন) প্রতিষ্ঠার পর ৭৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি কারখানা সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে; ২০টি কারখানায় নেয়া হয়েছে অংশীদার। চালু করার শর্তে ‘প্রচুর জমিসহ’ এসব কারখানা কিনে নিলেও নতুন মালিকদের অনেকেই তা করেননি। কারখানার জায়গায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।