পেঁয়াজসহ ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় কৃষিপণ্য বাজারে সরবরাহের নিয়মের ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Published in সমকাল on Tuesday 31 December 2019

বছরের আলোচিত চরিত্র পেঁয়াজ ও এডিস মশা

বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা কী- এ প্রশ্নের উত্তর চোখ বন্ধ করে যে কেউ বলে দিতে পারবে। একটি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর; অন্যটি পেঁয়াজ। বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ডেঙ্গু। শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ে। ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু সংক্রমণের পর কোনো বছরই একসঙ্গে এত মানুষ আক্রান্ত ও মারা যায়নি। মাস দুয়েক আগে হঠাৎ করে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। অস্বাভাবিক গতিতে মূল্য বেড়ে কেজিপ্রতি ৪০ টাকার পেঁয়াজ আড়াইশ’ ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনগুলো হাঁসফাঁস করেছে। তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রায় মহামারি আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়েছিল ৬৪ জেলায়। একইভাবে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও খেয়েছে নাকানিচুবানি। পৃথক এ দুই ঘটনায় সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা পড়েন তোপের মুখে। জনমনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। দেশ ছাপিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমেও শীর্ষ খবর হিসেবে স্থান পায় এ দুই ঘটনা। বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ডেঙ্গুও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

সরকার ও সংশ্নিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবকেই এ জন্য দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের অভিমত, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আগেভাগে রোগটির ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারলে এবং সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করলে এই ভয়ানক পরিস্থিতি অনেকটাই এড়ানো যেত। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চাহিদার কতটুকু পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং এর বাইরে কী পরিমাণ আমদানি করতে হয়- সে হিসাব করে বিকল্প আমদানির ব্যবস্থা থাকলে হয়তো এ সমস্যা এতটা প্রকট হতো না। কেবল ভারতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আমদানির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে কালোবাজারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

আতঙ্ক ছড়িয়ে আলোচনায় ডেঙ্গু: সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১৪৮ জন। বাস্তবে কয়েক লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৩০০ জন। মার্চ-এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গু জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরজুড়ে দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। মশাবাহিত এই জ্বর মোকাবিলায় সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থার শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা বেসামাল হয়ে পড়েন। তাদের সব পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ব্যর্থ করে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ও মৃত্যু- উভয় ক্ষেত্রেই রেকর্ড হয়েছে। মানুষের আতঙ্কের মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীট নিয়ে বেপরোয়া বাণিজ্যে মেতে ওঠে একটি সিন্ডিকেট। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও কীট বাণিজ্য ঠেকাতে পারেনি। ১২০ টাকার কীটের মূল্য ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের বিদেশ ভ্রমণ আটকানো যায়নি। দল বেঁধে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণে মেতেছিলেন কয়েকশ’ চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের এমন ঔদাসীন্যতা ও অব্যবস্থাপনায় জনমনে সৃষ্টি হয় ক্ষোভের। অনেকের বক্তব্য-বিবৃতিকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মশক নিধন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে নামেন মাঠে। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, ডিজি, সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ততক্ষণে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই ছিলেন ঝুঁকিতে। বাদ যাননি চিকিৎসক-নার্সও। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক-নার্স। এ পরিস্থিতির মধ্যেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশে স্বাস্থ্য বিভাগের অনীহা ছিল চোখে পড়ার মতো। রোগতত্ত্ববিদ, কীটতত্ত্ববিদরা বারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিমত, আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলে ভবিষ্যতে এই রোগ মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বছরের শেষ দিকে এসে কিছুটা স্বস্তির খবর যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে।

সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) উপদেষ্টা রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, ডেঙ্গুর এই বিস্তার একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে ধরন পাল্টে ডেঙ্গু এবার ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মধ্যে গত বছর থেকেই সেরোটাইপ-৩ পাওয়া যাচ্ছিল। এবার এই টাইপ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট, ব্রেইন, কিডনিসহ বহুমাত্রিক সমস্যা দেখা গেছে। ধরন বুঝে অ্যাডাল্ট মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে, যদি মশার প্রজননস্থল ও এডিস লার্ভা ধ্বংস করা যায়। আর সরকারের যারা এ বিষয়ে গবেষণা করেন তাদের কাজ হবে এডিস মশার ধরন নিয়ে গবেষণা করা। এজন্য ধারাবাহিকভাবে এটি রেকর্ড করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন। যাতে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন কোন পরিস্থিতিকে কী করতে হবে। তাহলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ কম হবে।

অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, জিকাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। জিকা এরই মধ্যে ভারতে এসে গেছে। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়বে। সব মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে ‘ওবাকিয়া’ নামে একটি ব্যাকটেরিয়া আছে। যেটি মশারির মধ্যে প্রবেশ করাতে পারলে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও জিকার ভাইরাসগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না। এই পদ্ধতি বিশ্বের ১২টি দেশে প্রয়োগ করা হয়েছে। দেশেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে উপকার পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।

কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। রাজধানীকেন্দ্রিক ডেঙ্গু এবার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া নিয়ে কীটতত্ত্ববিদরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। তাদের বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়নি। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় মশা মারা কিংবা দমন করা নয়, প্রথম কাজ হচ্ছে রোগের সংক্রমণ ও প্রশমন বন্ধ করা। অর্থাৎ ডেঙ্গু ভাইরাসের ট্রান্সমিশনকে প্রতিরোধ করা। অ্যাডাল্ট মশা মারার পাশাপাশি নতুন করে মশার যাতে জন্ম হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। সুতরাং এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। অন্যথায় আগামী বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের যে দায়িত্ব ছিল, তা যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে। এ কারণে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে। সুচিকিৎসার আওতায় মানুষকে আনা না গেলে আরও খারাপ পরিণতি হতে পারত। তবে এবারের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রশিক্ষণের রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকেই তা শুরু হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্নিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করবে। এর মধ্য দিয়েই ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিরোধে সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।

মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়েছে পেঁয়াজ: বছরের শেষভাগে পেঁয়াজ মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়ে নজর কেড়েছে সবার। কালোবাজারি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। কেজিপ্রতি ৪০ টাকার পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বাণিজ্যমন্ত্রীও ছিলেন অসহায়। এক পেঁয়াজের বাজার থেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কালোবাজারি চক্র। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কয়েকটি দেশ থেকে উড়োজাহাজে দ্রুত আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। দেশের পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম প্রধান দেশ ভারত। প্রতিবেশী দেশটি স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এরপর দেশের বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ দু-একদিনেই ৭০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। অথচ ওই সময়ে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ আমদানি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। এর পরে ভারত ২৯ সেপ্টেম্বর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জরি করে। তখন একদিনেই কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাকিয়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছে যায়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। পর্যায়ক্রমে বাজার বেড়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে। এর পরে তা আড়াইশ’ পেরিয়ে যায়।

অথচ কৃষি বিপণন আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, জরুরি অবস্থা বা সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে কৃষিপণ্যে দেশের বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রজ্ঞাপিত শস্য হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। এই শস্য এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু পেঁয়াজের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকার মূল্য নির্ধারণ না করায় ইচ্ছে মতো দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ আইনের ১৯-এর ‘ড’ ধারায় উল্লেখ আছে, কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকার নির্ধারিত হারের অধিক মুনাফা করলে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানার কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইন থাকলে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ ছিল না। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত- এবারের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে সতর্ক থাকতে হবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও বাজার বিশেষজ্ঞ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। ভোক্তা ও বিক্রেতা পর্যায়ে যৌক্তিক দামে এ পণ্য বিক্রি এখন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, পেঁয়াজসহ ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় কৃষিপণ্য বাজারে সরবরাহের নিয়মের ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর নিবন্ধন থাকা এবং তাদের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের কেনাবেচার পাকা রসিদ থাকা দরকার। এটি হলে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে আইনের কাঠামোতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের অযাচিত মুনাফা করার সুযোগ থাকবে না। এ জন্য এখনই জরুরি বিধিবদ্ধ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আসা দরকার।

সাবেক বাণিজ্য সচিব ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি না হওয়ায় সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা এটা করেছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়াতে পারলে এটি থাকবে না। কিন্তু দাম বৃদ্ধির পরে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সরবরাহ বাড়ানো যায়নি। এতে যারা অতিরিক্ত মুনাফা করছে তারা সে সুযোগ থেকে সরে আসছে না। সরবরাহ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি করতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অস্বাভাবিক মুনাফা করার ক্ষেত্রে আইনের যে বিধিনিষেধ আছে তা এখন প্রয়োগ করা উচিত। কৃষি বিপণন আইনের আওতায় আনা গেলে এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন সমকালকে বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে সরকার এরই মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। পেঁয়াজের মৌসুমের শেষভাগে এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার মাঝামাঝি স্বল্প সময়ের জন্য সংকটটি সৃষ্টি হয়। এই সংকট মোকাবিলায় টিসিবিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল। তারা পেঁয়াজ রপ্তানি স্থগিত করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর বিকল্প হিসেবে চীন, মিয়ানমার, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আমদানির বিকল্প দেশের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে বলে সচিব জানান।